—প্রতীকী ছবি।
মোট নম্বর এক হাজার। তার মধ্যে ৯০০-র ঘরে পেয়েছেন তিন জন, ৮০০-র ঘরে ২৮ জন। এ ছাড়া, প্রায় ১৮ শতাংশের প্রাপ্ত নম্বর ৬০০-র ঘরে, ৫৫ শতাংশের ৭০০-র ঘরে। স্বাভাবিক ভাবেই পড়ুয়াদের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হন তাঁদের শিক্ষকেরা। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটাই!
ডাক্তারির স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় পড়ুয়াদের একাংশের এ হেন নম্বর দেখে বিস্মিত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এমডি-এমএসের মতো পরীক্ষায় হরির লুটের মতো এমন নম্বর পাওয়ার নেপথ্যে অন্য বিষয় নেই তো?’’ রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার বাড়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেধা তালিকায় পড়ুয়ার সংখ্যাও। সেই চিত্র এ বার ডাক্তারির ক্ষেত্রেও দেখে আশ্চর্য স্বাস্থ্য শিবির। ডাক্তারির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, গণ টোকাটুকি, নম্বরে স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে আগেই রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন।
অতীতের পরিসংখ্যান বলছে, ১০-১৫% পড়ুয়া ৬০ শতাংশের উপরে নম্বর পেতেন। আর ৭৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া ছিল বিরল। ঘটনাটি যে বেশ ব্যতিক্রমী, তা স্পষ্ট স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুহৃতা পালের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। বোর্ড অব স্টাডিজ়ের সচিব ও প্রধান পরীক্ষকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী দিনে সকলের প্রাপ্ত নম্বরে যাতে সামঞ্জস্য থাকে, সে বিষয়েও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
দিন কয়েক আগে প্রকাশিত, চলতি বছরের এমডি-এমএস পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১২৬৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্বাধিক নম্বর উঠেছে ৯৫২। ৮০০ থেকে ৯০০-র মধ্যে নম্বর পেয়েছেন ২৮ জন, ৭০০ থেকে ৮০০-র মধ্যে নম্বর প্রাপক ২২৫ জন। আর ৬০০ থেকে ৭০০-র মধ্যে নম্বর প্রাপ্তি হয়েছে ৬৯৯ জনের।
রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘এক কালে ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে ঘাম ছুটে যেত। এ তো মুড়ি-মুড়কির মতো নম্বর দেওয়া হয়েছে। এতে পরীক্ষার মান বজায় থাকছে না। এত নম্বর দিয়ে কি প্রমাণ করার চেষ্টা হল অন্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যে মেধাবী পড়ুয়া বেড়ে গিয়েছে?’’ শিক্ষক-চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে বলা হয়, অনার্স রয়েছে। আর ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে বলা হয়, সরাসরি অনার্স থাকল।
এমডি-এমএস পরীক্ষায় ‘অবজেক্টিভ টাইপ’ প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু প্রদীপ মিত্র জানাচ্ছেন, প্রাপ্ত নম্বর দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, তেমন ধরনের প্রশ্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তা না হলে দুটো সম্ভাবনা থাকে। হয় ঠিক মতো খাতা দেখা হয়নি, কিংবা প্রশ্ন জানা থাকায় সকলেই এত ভাল পরীক্ষা দিয়েছেন যে, নম্বর কাটার জায়গা ছিল না।’’ ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘ডাক্তারির পরীক্ষায় প্রধান লক্ষ্য থাকে পাশ করা। সেখানে হোম সেন্টারের যুগে, কোনও একটি বিশেষ কলেজের একটি বিশেষ বিভাগে প্রায় সবাই অনার্স পেয়ে গেলে বা ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেলে প্রশ্ন তো উঠবেই।’’
চিকিৎসকদের অভিযোগ, স্নাতকোত্তর পাশ করার পরে এখন কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ‘বন্ড পোস্টিং’ দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও নিজের কলেজের কিছু পড়ুয়াকে ধরে রাখতে গিয়ে নম্বরে ‘স্বজনপোষণ’ শুরু হয়েছে। আরও অভিযোগ, এক শ্রেণির চিকিৎসক-নেতার কথা মেনে চললেও ইচ্ছে মতো নম্বর পাওয়া সম্ভব। সব মিলিয়ে মানসের কথায়, ‘‘এমন নম্বর ডাক্তারিতে স্বাভাবিক নয়। তাই প্রহসনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’’