স্মৃতির যাতনা, সিপিএমের সুজনকে জড়িয়ে কান্না বিজেপির বঙ্কিমের

আবেগের বহিঃপ্রকাশ না হয় হয়েই গেল। কিন্তু সেই আবেগে কি আবার মন বদলের কোনও ইঙ্গিত আছে? এক সময়ে বিমান বসুরও স্নেহধন্য বঙ্কিমবাবু কি ফিরতে চান পুরনো দলে?

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

সুজনের কাছে বঙ্কিম। নিজস্ব চিত্র

হয়তো কারও বুকে মাথা রেখে, দীর্ঘশ্বাস হাসি দিয়ে ঢেকে, ভুলবে যন্ত্রণা...। নব্বইয়ের দশকে গেয়েছিলেন ‘জীবনমুখী’ গায়ক। বাস্তবের জীবনে দীর্ঘশ্বাস চেপে হাসি নয়, প্রাক্তন সতীর্থের বুকে মাথা রেখে হাপুস নয়নে কাঁদলেন রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী!

Advertisement

ঘটনা কয়েক দিন আগের। কল্যাণীতে রাতের অন্ধকারে পার্শ্বশিক্ষকদের জমায়েতে পুলিশের লাঠিচালনা ঘিরে বিতর্ক তখন তুঙ্গে। ক্ষুব্ধ পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতিবাদী অবস্থানে যোগ দিতে পরের দিন কল্যাণীতে হাজির হয়েছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ভিড় ঠেলে, ছাতা সরিয়ে হঠাৎই তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন ছোটখাটো চেহারার এক ভদ্রলোক। এক বার সুজনবাবুর পা ছুঁয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মাথায় হাত রেখে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন সুজনবাবু আর কেঁদে চলেছেন আগন্তুক— এই দৃশ্য চলতে থাকে কিছু ক্ষণ। শেষমেষ সুজনবাবুই তাঁকে ঠান্ডা হয়ে বসতে বলেন।

সে দিনের সেই আগন্তুকের নাম বঙ্কিমচন্দ্র ঘোষ। নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে দু’বারের প্রাক্তন বিধায়ক এবং বামফ্রন্ট জমানায় পঞ্চায়েত দফতরে প্রতিমন্ত্রী। দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ও ‘সন্দেহজনক’ মতিগতি দেখে গত ৮ জুলাই সকালে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম। সেই বিকালেই বিজেপিতে যোগ দেন বঙ্কিমবাবু। দলত্যাগের পরে বাম পরিষদীয় নেতার সঙ্গে পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতিবাদেই প্রথম দেখা বঙ্কিমবাবুর এবং সেই সাক্ষাতই আবেগের অশ্রুসিক্ত!

Advertisement

সুজনবাবুর কথায়, ‘‘ওখানে গিয়েছি, মাইকে উদ্যোক্তাদের নানা রকম ঘোষণা চলছে। তার মধ্যেই হঠাৎ এগিয়ে এসে এক জন জড়িয়ে ধরার পরে দেখি বঙ্কিম! কোনও কথাই বলতে পারছিল না, শুধু কাঁদছিল। কিছু বলতে চাইছিল হয়তো।’’ আর বঙ্কিমবাবু বলছেন, ‘‘সুজনদা’র সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক, আমাকে খুব ভালবাসত। সে দিন দেখতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম!’’

আবেগের বহিঃপ্রকাশ না হয় হয়েই গেল। কিন্তু সেই আবেগে কি আবার মন বদলের কোনও ইঙ্গিত আছে? এক সময়ে বিমান বসুরও স্নেহধন্য বঙ্কিমবাবু কি ফিরতে চান পুরনো দলে? একটু ইতস্ততই শোনায় বঙ্কিমবাবুর গলা— ‘‘বামফ্রন্ট জমানার আমিই প্রথম মন্ত্রী, যে বিজেপিতে গিয়েছে। অনেক অভিমান নিয়ে চলে এসেছি। উচ্চ নেতৃত্ব এক বার বহিষ্কার করেছেন। আবার ফেরার আবেদন করলে সময় লাগবে, বয়স হয়ে যাবে তত দিনে!’’ তিনি জানাচ্ছেন, নতুন ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। জন্মাষ্টমীর বিকালেও বিজেপির ডাকে কলকাতায় এসেছিলেন।

আর সুজনবাবুর মতে, বহিষ্কৃত এবং দলত্যাগীর সহজে ফেরার পথ সিপিএমে নেই। তাই হঠাৎ দেখা এবং স্মৃতি উথলে ওঠার পরেই কিছু ঘটে যাবে, এমন নয়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement