শনিবার বিকেলেই সরকারি ভাবে সিআইডি বলে দিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কোনও ফ্ল্যাট বা বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে না। তার কয়েক ঘণ্টা পরে রাতেই বাইপাসের কাছে আনন্দপুর থানার মাদুরদহে ‘বেঙ্কট গ্রিনস’ অ্যাপার্টমেন্টের যে ফ্ল্যাটে সিআইডি হানা দিয়েছে, সেটি তাঁর এবং তাঁর স্বামীর বলে রবিবার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক ভয়েস মেসেজ-এ দাবি করলেন ভারতী।
রীতিমতো হুমকির সুরে ভারতী জানিয়েছেন, তিনি এই মুহূর্তে রাজ্যের বাইরে। রাজ্যে ফিরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে এ দিন ফের জানিয়েছেন তিনি। ভারতীর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য শনিবারই সিআইডি’র দাবিকে নস্যাৎ করে জানিয়েছিলেন, গত বৃহস্পতিবার নাকতলার বাড়িতে হানা দিয়ে সিআইডি যে দলিল ও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে, তাতে ভারতী ও তাঁর স্বামীরই নাম রয়েছে। শনিবার মাদুরদহের ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকা, গয়না ছাড়াও বেশ কিছু জমির দলিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। কিন্তু সেই সব নথি কার নামে, সে নিয়ে মুখ খুলছে না সিআইডি।
ভারতী রবিবার বলেন, ‘‘আমাকে বা আমার স্বামীকে না জানিয়েই সিআইডি মাদুরদহের ফ্ল্যাটে তল্লাশি শুরু করেছে। গত দু’রাত ধরে সিআইডি অফিসারেরা আমার ওই ফ্ল্যাটে নিঃশব্দে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন। তাঁরা বড় বড় ব্যাগ নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন এবং সেখানে গত দু’রাত্রি ধরে থেকেওছেন।’’ প্রাক্তন এই পুলিশ সুপারের অভিযোগ, সিআইডি অফিসারেরা তাঁর ফ্ল্যাটে তথ্যপ্রমাণ সাজিয়ে রেখে তা পরে তাঁর বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। এমনকী, এই তল্লাশির সাক্ষী হিসেবে সিআইডি ‘নিজেদের লোক’ এনেছে বলে দাবি ভারতীর। তিনি জানান, সিআইডি অফিসারেরা যে দু’রাত ধরে তাঁর ফ্ল্যাটে ঘাঁটি গেড়েছেন, তা অনেকেই দেখেছেন।
আরও পড়ুন: ভারতীর প্রসঙ্গ এড়াল সিআইডি
ফ্ল্যাট-কাণ্ড: মাদুরদহের এই অ্যাপার্টমেন্টেই তাঁর ফ্ল্যাটে দু’দিন ধরে সিআইডি তল্লাশি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ভারতী ঘোষের।
ভারতীর আরও অভিযোগ, তল্লাশির নামে গত ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর নাকতলার ফ্ল্যাট যে ভাবে লন্ডভন্ড করা হয়েছিল, মাদুরদহের ফ্ল্যাটেও তেমনই করা হয়েছে। ভারতীর দাবি, ‘নির্দিষ্ট কিছু বলার জন্য’ ওই অ্যাপার্টমেন্টের এক জনকে সিআইডি প্রভাবিত করেছে বলেও তিনি খবর পেয়েছেন। সিআইডি’র এই তল্লাশি অভিযানকে ‘সরকারি মদতে পুষ্ট সন্ত্রাস’ বলে মন্তব্য করে ভারতী জানিয়েছেন, কেন তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশি হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র সিআইডি দেখায়নি। ভারতীর আরও অভিযোগ, তাঁর ওই ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার মঙ্গল সিংহকে রবিবার সকালে অপহরণ করেছে সিআইডি। সে কারণে মঙ্গলের মেয়ে রবিবার বিহার থেকে বারবার ফোন করেও বাবার কোনও খোঁজ পাননি বলে দাবি করেছেন ভারতী।
ওই আবাসনের বেসমেন্টে রবিবার দুপুরে এঁদের দেখেই বেড়েছে জল্পনা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানায় তোলাবাজি ও তছরুপের একটি মামলার সূত্রে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বারোটি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিআইডি। ভারতীর দাবি, তার মধ্যে তাঁর নাকতলার বা়ড়ি এবং কালিকাপুরের ইএম বাইপাস সংলগ্ন তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়িও ছিল। তা ছাড়াও ভারতীর ঘনিষ্ঠ কিছু পুলিশ অফিসারের ডেরাতেও হানা দেয় সিআইডি। সে দিনও প্রচুর নগদ টাকা এবং সোনা বাজেয়াপ্ত করে সিআইডি। ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার ওসি প্রদীপ রথকে। গ্রেফতার হয়েছেন ভারতী ‘ঘনিষ্ঠ’ সোনার কারবারি দাসপুরের বিমল ঘোড়ুই।
ফ্ল্যাটে তল্লাশি ঘিরে ভারতীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত রবিবারেও। কিষেণজি-ছত্রধর মাহাতো-বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে ভারতীর তুলনা করে কটাক্ষ করেছে বাম-কংগ্রেস। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তিনি পুরোপুরি তৃণমূলের হয়ে কাজ করছিলেন। দুর্ভাগ্য এমনই যে, সেই তৃণমূলই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু!’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘উনি শুভেন্দুবাবুকেও (শুভেন্দু অধিকারী) ধমক দিয়েছেন যে, আমার বিরোধিতা করলে আমিও ছাড়ব না। স্বাভাবিক, ওঁদের ভয় আছে।’’ দিলীপের মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আমার নাম করে উনি (ভারতী ঘোষ) কোনও অভিযোগ করেননি। নাম করে কোনও অভিযোগ করলে নিশ্চিত ভাবেই প্রত্যুত্তর দেব। নাম করার সাহস যাদের নেই, তাদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’