(বাঁ দিক থেকে ) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়, উদয়ন গুহ। ছবি: সংগৃহীত।
রেশন দুর্নীতি নিয়ে বুধবার সরাসরি সিপিএম তথা বামেদের নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৪ বছরের বাম জমানায় সিংহভাগ সময় খাদ্য দফতর ছিল শরিকদল ফরওয়ার্ড ব্লকের (ফব) হাতে। মমতার অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাম দলটির বর্তমান রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্ত করে বার করুন।’’ একদা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা এবং অধুনা মমতা মন্ত্রিসভার সদস্য উদয়ন গুহ অবশ্য অতীতের ‘দায়’ নেওয়ার কথা বললেন। তবে অন্য ভাবে।
ফব-র বর্তমান রাজ্য সম্পাদক নরেনের কথায়, ‘‘শুধু খাদ্য কেন? যদি কোনও দফতরে, কোনও দুর্নীতি থেকে থাকে, তা হলে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন! আমরা কিচ্ছু বলতে যাব না। আমরাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই দাবি জানাচ্ছি।’’ মমতার এ হেন অভিযোগের পর কি তাঁদের দল কোণঠাসা হবে বামফ্রন্টের ভিতরে? নরেনদের কি কোনও ‘অস্বস্তি’ রয়েছে? ফব-র বাংলা কমিটির সম্পাদক বলেন, ‘‘কোনও অস্বস্তি নেই। কেউ যদি দুর্নীতি করেন বা কারও যদি চারিত্রিক অধঃপতন হয়, তার দায় পার্টির নয়।’’
প্রসঙ্গত, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়েরা নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর একই কথা বলেছিল তৃণমূলও। নরেনও কি মনে করেন, তৃণমূলের যাঁরা গ্রেফতার হচ্ছেন দুর্নীতির অভিযোগে, সেই দায় তাঁদের একারই? দলগত ভাবে তৃণমূলের নয়? জবাবে ফব-র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমি কী মনে করি সেটা বড় কথা নয়। আমি দলের কথা বলছি। আমাদের পার্টি বা বামপন্থী কোনও দল, কাউকে দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দেয় না। সেই দায় দল কেন নেবে?’’
আর উদয়ন? তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘খাদ্য এমন একটা দফতর, যেখানে বিভিন্ন স্তরে নয়ছয় করার সম্ভাবনা থাকে। সেখানে যে মন্ত্রীরা সব সময় যুক্ত থাকেন এমন নয়।’’ দিনহাটার নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘এই যে কী এক রাকিবুর না বাকিবুরের নাম শুনছি! সে তো আর এই ১২ বছর ব্যবসা করছে না। আগে থেকেই করছে। তা হলে তখন সে সাধু ছিল, এখন তৃণমূলের আমলে সে চোর হয়ে গেল?’’ প্রসঙ্গত, শাসকদল তো বটেই, নানা মহল থেকেই দাবি করা হচ্ছে, বাকিবুরের ‘উত্থান’ বাম জমানাতেই। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া এক নেতার সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল। উদয়ন প্রবাদপ্রতিম ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা প্রয়াত কমল গুহের পুত্র। তিনি নিজেও দীর্ঘ দিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর তৈরি করা দল করেছেন। ছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। সেই তিনি কি ফব-তে থাকার সময়ে এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি তো শুভেন্দু অধিকারী নই। আড়াই বছর আগে দল বদল করে বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই করেছেন, সেই করেছেন। আমি তখন (ফব-তে থাকার সময়ে) যখন প্রতিবাদ করতে পারিনি, তখন তার দায় তো আমারও!’’
রেশন বণ্টন কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পর রাজ্য রাজনীতি নতুন করে সরগরম হয়েছে। এক দিকে বিরোধীরা যেমন তৃণমূলকে নিশানা করছে, তেমনই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বাম জমানাকে দায়ী করেছেন। বুধবার মমতা বলেছিলেন, ‘‘সিপিএমের জমানায় তো এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড করে রেখেছিল! সেই টাকা কোথায় যেত? আমরা ক্ষমতায় এসে সিপিএমের করে-যাওয়া এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করেছি। সেটা করতেও সাত-আট বছর সময় লেগেছে। সিপিএম যা করে গিয়েছে, তার দায় আমাদের বইতে হচ্ছে।
অনেকের মতে, বাম জমানাতেও পূর্ত, খাদ্য-সহ বিভিন্ন দফতরে অনিয়ম হত। টাকাপয়সাও দলীয় তহবিলে ঢুকত বলে সেই সময়ে অভিযোগ করতেন বিরোধীরা। তৃণমূলের নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, এখন কি সিপিএম বা বাম শরিক দলগুলি অট্টালিকার মতো পার্টি অফিস তৈরি করতে পারবে? মল্লিকবাজার থেকে মৌলালি পর্যন্ত হাঁটলে রাস্তার দু’ধারে সিপিএম ও তাদের গণসংগঠনগুলির যে অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে, তার অঙ্ক কয়েকশো কোটি টাকা। সরকারে থাকার সুবিধা নিয়েই তো সে সব হয়েছিল। তা কি দুর্নীতি নয়?