বহু কথা রাখা হয়নি সাবেক ছিটমহলে

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মঙ্গলবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা সেই অনুষ্ঠানে নিজেদের কথা যখন বলছিলেন, অসহায় দেখাচ্ছিল তাঁদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৬
Share:

ফাইল চিত্র।

আব্দুল মোতালেব, রেশমা বিবিরা বলছিলেন— চার বছর কেটে গেলেও অনেক কথাই এখনও রাখা বাকি প্রশাসনের। এমনকি, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের পরে সরকারি রক্ষাকবচ হিসেবে যে ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড পেয়েছিলেন, তা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়েছে, বলছিলেন তাঁরা। ঠেকে শিখতে শিখতে এখন নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অনেকে সংশয়ে ভোগেন।

Advertisement

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মঙ্গলবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা সেই অনুষ্ঠানে নিজেদের কথা যখন বলছিলেন, অসহায় দেখাচ্ছিল তাঁদের। আব্দুল রশিদ মিঞা যেমন বলেন, যখন দেখা যায় সরকারি নথি দিয়েও নিজেদের রক্ষা করা যাচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়েই ভারতকে ভালবাসার কথা বড় বড় হরফে ঘোষণা করে টাঙিয়েছেন নিজের বাড়ির দেওয়ালে— ‘আই লভ মাই ইন্ডিয়া’।

সাবেক ছিটমহলের বাইরে পা দিলে এত দিন যাঁদের পুলিশ-বিএসএফ ধরত, সেই কোচবিহারের করলা-১-এর বাসিন্দা রশিদ জানান, বিনিময়ের পরে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পেয়ে ভরসা পেয়েছিলেন। তাঁদেরই এক জন, পোয়াতুরকুঠির মহম্মদ রহিদুল কাজের জন্য দিল্লির গুরুগ্রামে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন। ২০১৭-র ১৪ অগস্ট পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। রহিদুল তখন নিজের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড দেখান। ছিটমহলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ যাচাই করে জানিয়ে দেয়, সে সব ভুয়ো। রহিদুলের বাড়ির লোকেরা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সেখান থেকে আশ্বাস মেলে, কাগজপত্র পাঠানো হবে দিল্লিতে। সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশ রহিদুল এবং আরও এক জনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করে বলে। টানা দু’বছর লড়াই করে সম্প্রতি রহিদুলকে দেশে ফিরিয়েছে পরিবার। প্রশাসন জানায়, ভোটার কার্ড সার্ভারে আপলোড হয়নি বলেই সমস্যা হয়।

Advertisement

রশিদের নিজের জীবনও কম ঘটনাবহুল নয়। স্কুলে পড়ার জন্য তখনকার ‘ইন্ডিয়ার’ করলা-২ গ্রামের এক জনকে বাবা সাজিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে হয়েছিল। না হলে পড়াটাই হত না। তাঁর মতো এমন অনেকেই আছেন। এখন সেই নথি বদলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

এ দেশের নাগরিকের স্বীকৃতির পরে নাগরিক জীবনের উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি মিলেছিল, অভিযোগ, তা অনেকটাই ফিকে। নতুন রাস্তা তৈরি হয়নি, পানীয় জলের টিউবওয়েল অকেজো। বাসিন্দাদের কারওর জমির দলিল কোচবিহারের রাজার, কারওর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের, কারওর আবার বাংলাদেশ সরকারের। সরকারি প্রকল্পে সেই জমি নেওয়া হলেও তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সরকারি অফিসে গেলে বলা হচ্ছে, ওই জমি এখন সরকারের।

সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘এখন আমরা কী করব?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement