দার্জিলিঙের সিংমারিতে গত ১৭ জুন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিন মোর্চা সমর্থক। সিআইডি-র দাবি ছিল, সরকারি নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিই চালায়নি। তিন জনের দেহ থেকে উদ্ধার করা চারটি বুলেট পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। সরকারি ভাবে তার রিপোর্ট এখনও দেওয়া হয়নি। তবে বিকৃত হয়ে যাওয়া বুলেটগুলি দেখে সিআইডি-র দাবি ছিল, সেগুলি দেশি বন্দুক থেকে ছোড়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই বিকৃতি দেখে বলা সম্ভব নয়, তা সরকারি বন্দুক থেকে বেরিয়েছে, নাকি দেশি বন্দুক থেকে।
সিআইডি-র তরফে জানানো হয়, সিংমারিতে গোলমালের ঘটনায় নিহতদের দেহ থেকে যে বুলেটগুলি মিলেছিল, সেগুলি ছিল দোমড়ানো এবং চেপ্টে যাওয়া। সরকারি তদন্তকারীদের দাবি ছিল, শুধু দেশি বা ইম্প্রোভাইজ্ড বন্দুক থেকে গুলি চালালেই এমনটা হয়। সরকারি বাহিনী যে সব বন্দুক ব্যবহার করে, সেগুলি থেকে চালানো বুলেটের চেহারা এমন বদলে যায় না।
এই তত্ত্ব খারিজ করে দিচ্ছেন খোদ রাজ্যের পরীক্ষাগারের ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, নিহতের শরীরে ঢোকার পরে বুলেট দুমড়ে, চেপ্টে গিয়েছে কি না, তা দেখে মোটেও বলা সম্ভব নয় যে, সেটা দেশি বন্দুক নাকি সরকারি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি বন্দুক থেকে ছোড়া হয়েছিল।
স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রবীণ ব্যালিস্টিক বিশেষজ্ঞ অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘কোনও গুলি যদি শরীরে ঢুকে সোজা হাড়ে গিয়ে লাগে, তা হলে তা দুমড়ে বা চেপ্টে যেতে পারে। তা সে যে বন্দুক থেকেই ছোড়া হোক না কেন!’’
একই পরীক্ষাগারের আর এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, এমনিতে পুলিশ বা আধা সেনা যে সব বন্দুক ব্যবহার করে, তার গুলি শক্ত। সীসা ছাড়াও জিঙ্ক আর তামার আবরণ থাকে।
কিন্তু দেওয়াল বা শক্ত কোনও জায়গায় ধাক্কা খেয়ে সেই বুলেট শরীরে ঢুকলে কিংবা হাড়ে লাগলে থেবড়ে যেতেই পারে। তাঁরও মত, ‘‘নিহতের শরীর থেকে পাওয়া দোমড়ানো বা চেপ্টে যাওয়া বুলেট দেখে বলা সম্ভব নয় যে, সেটা সরকারি বন্দুক থেকে ছোড়া হয়নি।’’ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘বুলেটের কিছু বিশেষ চিহ্ন, বিশেষ দাগ পরীক্ষা করে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, কোন ধরনের বন্দুক থেকে সেগুলো ছোড়া হয়েছে।’’
বুলেটের ব্যালিস্টিক রিপোর্ট চলতি মাসেই স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে সিআইডি-র হাতে যাওয়ার কথা।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি, ঘটনার দিন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতেই প্রাণ গিয়েছে তাঁদের সমর্থকদের। উল্টো দিকে, রাজ্য সরকারের দাবি, পুলিশ বা আধা সামরিক বাহিনী গুলিই চালায়নি। গুলি চালিয়েছে মোর্চা আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।
সিআইডি জানাচ্ছে, সিংমারির ঘটনার সাক্ষী হিসেবে এখনও পর্যন্ত ২০-২৫ জন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা গিয়েছে। সে দিন তাঁরা বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এই অবস্থায়, কোন ধরনের বন্দুক থেকে গুলি চলেছিল, সেটা তদন্তে বড় সহায়ক হতে পারে।