বৈঠকে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি রুখতে সেচ দফতরের অস্ত্র ‘হোয়াটসঅ্যাপ’।
সেচ দফতরের উত্তরবঙ্গের তাবড় আধিকারিকদের নম্বর দিয়ে তৈরি হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেই গ্রুপে রয়েছে খোদ সেচমন্ত্রীর মোবাইল নম্বরও। মোবাইল অ্যাপলিকেশন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কেউ কিছু লিখলে অথবা ভিডিও এবং ছবি তুলে দিলে একসঙ্গে সকলের মোবাইলে পৌঁছে যায়। সকলে একসঙ্গে আলোচনাও চালাতে পারেন।
সেচ দফতরের গ্রুপের মাধ্যমে কোনও নদীতে জল বাড়লে অথবা বাঁধের ক্ষতি হলে সেই গ্রুপের মধ্যে কয়েক মুহূর্তে দফতরের জেলা থেকে রাজ্য সর্বস্তরে ছড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে উঁচুতলার থেকে বন্যা রোখার কাজ শুরুর নির্দেশ নীচুতলায় পৌঁছে যাবে কয়েক মিনিটে। ফলে দ্রুত নির্দেশ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে জানানো হয়েছে। গভীর রাতেও কোনও আপদকালীন পরিস্থিতি তৈপি হলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মন্ত্রী সহ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই সেচ দফতরের ক্যালেন্ডারে বর্ষার শুরু ধরা হয়। সেই মতো আজ, সোমবার থেকে সেচ দফতরের কন্ট্রোল রুম চালু হচ্ছে। সেই সঙ্গে চালু হচ্ছে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপও। এবার আরও বেশ কিছু প্রযুক্তি নির্ভর পদক্ষেপ করতে চলেছে সেচ দফতর। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস জানতে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের জলপাইগুড়ির পূর্বাভাস কেন্দ্রের কারিগরি সাহায্য নিচ্ছে সেচ দফতর।
ভূটানে নদীর গতিপ্রকৃতি জানতে সেখানে কেন্দ্রীয় জল আয়োগের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হচ্ছে এ বছর থেকে। নদীর জল বাড়ার হার টের পেতে বিভিন্ন ব্যারেজে ‘সেন্সর’ বসানো এবং মহানন্দা, বালাসন নদীতে দু’টি নতুন রেনগেজ তথা বৃষ্টির পরিমাণ মাপার যন্ত্র বসছে। চলতি বছর থেকেই সেচ দফতর নিজস্ব ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা চালু করেছে। বর্ষার মরসুমে প্রতিদিন সকালে সব নদী এবং বাঁধের পরিস্থিতি জানতে ভিডিও কনফারেন্স হবে। মন্ত্রী নিজেই এই কনফারেন্স করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিন রবিবার দফতরের আধিকারিক, বিভিন্ন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় জল আয়োগের প্রতিনিধিদের নিয়ে শিলিগুড়িতে বৈঠক করেছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘কোথাও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে যদি দ্রুত পদক্ষেপ করলে বন্যা রুখে দেওয়া যায়। আগে কোথাও কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তার খবর বিভিন্ন মহলে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যেত। পদক্ষেপ করতেও সময় লাগত। সে কারণেই এ বারে হোয়াটসঅ্যাপের সাহায্য নেব আমরা। তাতে বিভিন্ন নদীর পরিস্থিতি কয়েক মিনিটেই সেচ দফতরের সর্বস্তরে পৌঁছে যাবে। পদক্ষেপও দ্রুত হবে।’’
চলতি বছরে আরও এক ধাপ এগিয়েছে সেচ দফতর। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের বন্যাপ্রবণ নদীগুলির বেশিরভাগই ভূটান থেকে আসা কোনও না কোনও নদীর শাখা বা উপনদী। এতদিন ভূটানে কত বৃষ্টিপাত হয়েছে অথবা সেখানে নদীতে জল কেমন বেড়েছে তার কোনও সরকারি তথ্য রাজ্যের সেচ দফতরের কাছে পৌঁছত না।
ফলে বন্যার কোনও আগাম সর্তকতাই দিতে পারত না দফতর। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির দেখা নেই কিন্তু ভূটানের অতিবৃষ্টির জেরে ডুয়ার্সে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। এ বছর থেকে ভূটানের নদীর জল বাড়ার প্রবণতার তথ্য পাবে সেচ দফতর। কেন্দ্রীয় জল আয়োগ ভূটানে তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ এবং বাসরা নদীতে জল মাপার যন্ত্র বসিয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটায় ভূটানের নদীর প্রবণতার তথ্য কেন্দ্রীয় জল আয়োগের প্রযুক্তি মেনে সেচ দফতরের কাছে পৌঁছে যাবেয় ভূটানে টানা বৃষ্টি হলে কী পরিমাণ জল বাড়ছে তাও জানতে পারবে দফতর। এর ফলে ডুয়ার্সের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতি বছররের মতো জলপাইগুড়িতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম হবে। আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, কোচবিহারেও কন্ট্রোল রুম থাকছে। বন্যা পরিস্থিতি জানতে এ বছর টোল ফ্রি নম্বর থাকছে। প্রাক বর্ষার সংস্কার কাজে এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ করেছে সেচ দফতর। পুরোনো বাঁধ মজবুত করার সঙ্গে নতুন প্রায় ২৫ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে ফের উত্তরবঙ্গে এসে বৈঠক করবেন বলে এ দিন সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন।