কাঁথি-২ ব্লকের সরপাইতে জমি থেকে জল বার করায় ব্যস্ত চাষি (বাঁ দিকে), ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়ক পরিণত হয়েছে জলপথে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, হলদিয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার সারাদিন-রাত ধরে জেলার অধিকাংশ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে মোট প্রায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে তমলুক-হলদিয়া মহকুমায় ১২৩ মিলিমিটার, কাঁথিতে ১০৬.৬ মিলিমিটার ও এগরাতে ৭৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষের জমি জলমগ্ন হওয়ার খবর আসছ । তবে এখনও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। জেলার বিভিন্ন নদীর জলস্তর বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’’
বৃষ্টির সাথে মঙ্গলবার রাতে নন্দীগ্রামের মহম্মদপুর এলাকার মাধবপুর ও নয়াচক গ্রামে ঝড়ের জেরে প্রায় ৪০ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবারও সকাল থেকে জেলা জুড়েই ভারী বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। প্রবল বৃষ্টির জেরে জেলাজুড়েই স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে । অধিকাংশ স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিলে অনেকটাই কম।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে ইতিমধ্যে জেলায় কংসাবতী নদীর জলস্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে নদীবাঁধের পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। পাঁশকুড়ায় কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধে ধ্বস নামার ফলে বাঁধের পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়েছে। পাঁশকুড়ার গড়পুরুষোত্তমপুরের কাছে ২০১৩ সালে যেখানে নদীবাঁধ ভেঙে বন্যা হয়েছিল সেখানে মেরামতি করা বাঁধে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে জেলা সেচ দফতর। খোদ জেলা ও মহকুমা সেচ দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা পাঁশকুড়ায় থেকে ওই এলাকায় নদী বাঁধের পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাচ্ছে। অন্য দিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মাঝে থাকা চণ্ডীয়া নদীর জলস্তর এখন বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে বইছে। জেলা পূর্ব দিকে থাকা রূপনারায়ণ নদীর জলস্তরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রূপনারায়ণ নদীর ধারে থাকা তমলুক, কোলাঘাট ও মহিষাদলের নাটশালের কাছে মতস্যচক এলাকায় নদীর বাঁধ ধ্বসে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে । পটাশপুরের কাছে কেলেঘাই-বাগুই নদীর জলস্তর বেড়েছে। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার কল্পরুপ পাল বলেন, ‘‘জেলার নদীগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু এলাকায় নদীবাঁধের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। পাঁশকুড়ায় কাঁসাই ও তমলুক, মহিষাদলে রূপনারায়ণ নদীর বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ধ্বস নামায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
জেলার বিভিন্ন নদীর জলস্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলা সদর তমলুক শহরে ৮, ৯, ১৪, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা, মেচেদা বাজার ও দেউলিয়া বাজার এলাকায় রাস্তা-সহ ঘরবাড়ি ও দোকান মঙ্গলবার রাত থেকেই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। তমলুক পুরসভার ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা আগে থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে এইসব এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল থাকার কারণে একটু ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জল জমে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। মহিষাদল, ভগবানপুর, পটাশপুর ও এগরা ব্লকের বেশীর ভাগ এলাকায় চাষজমি জলমগ্ন হয়ে আমন ধানের বীজতলা, রোয়া ধানের জমি, আউশ ধানের রোয়া ধানজমি, সব্জি, ফুল, পান চাষের ক্ষেত, মাছ চাষের পুকুর জলে ডুবে গিয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ঘাটাল শহর। বুধবার ভোর থেকেই ঘাটাল পুর এলকার ৯টি ওয়ার্ডে জল ঢুকতে শুরু করেছে। শহরের আড়গোড়া, শুকচন্দ্রপুর, গম্ভীরনগর, চাউলি,দুধেরবাঁধ সহ বিভিন্ন এলাকায় জলে ঢুকে পড়েছে। শহরের রাস্তা গুলিতেও জল উঠে যাওয়ায় নৌকায় করে যাতয়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বুধবার সকাল থেকেই ক্ষীরপাই সংলগ্ন কেঠিয়া চাতালের উপর জল জমে যাওয়ায় জলে নীচে চলে যায় ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “এদিন ঘাটালের মহকুমাশাসক সমস্ত স্তরের আধিকারিক ও জন প্রতিনিধীদের নিয়ে ঘাটালের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকও করেছেন।” ঘাটালের মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কাপুর বলেন, “ত্রাণ, নৌকা, উদ্ধারকারী দল, ফ্লাড শেল্টারের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঘাটালের মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরা বলেন, “৩০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে কংসাবতী জলাধার থেকে। ওই জল বৃহস্পতিবার ঘাটালে ঢুকবে। ফলে মহকুমার বিস্তৃর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার একটা আশঙ্কা থাকছেই।”