ফাইল চিত্র।
ভরা বর্ষায় বেশ কম দামেই ইলিশের স্বাদ চেখেছে আমবাঙালি। আর মাস দুয়েক সমুদ্র সহায় থাকলে পুজোর মুখেও বাঙালির পাতে উঠতে পারে রুপোলি শস্য। এমন আশায় রয়েছেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা।
মরসুমের শুরু থেকেই অল্পবিস্তর ইলিশ উঠেছে মৎস্যজীবীদের জালে। ফলে বাংলার বিভিন্ন বাজারে ইলিশের জোগান ভালই ছিল। জোগান ভাল থাকায় মাছের আড়তগুলিতে বেশ কম দামেই ইলিশ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বার বঙ্গোপসাগরে ইলিশের খরা কাটলেও আশানুরূপ ইলিশ মেলেনি বলে দাবি মৎস্যজীবী সংগঠনের। যদিও সমুদ্রের মর্জির উপরেই আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, সমুদ্র উত্তাল না-হলে আগামী দু’মাস আরও ইলিশ উঠবে বলে আশা করছে তারা। এর জেরে পুজোর মুখে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারতে ব্যাপক হারে ইলিশের দেখা মিলতে পারে।
মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে খবর, ছোট-বড় সব মিলিয়ে জেলার প্রায় ৩ হাজার ট্রলার এবং ট্রলি বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরতে যায়। এক-একটি ট্রলারকে সমুদ্রে মাছ ধরতে পাঠাতে প্রায় দেড় থেকে দু’লক্ষের কাছাকাছি খরচ হয় ট্রলার মালিকদের। কিন্তু পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে বহু ট্রলারই চলতি বছর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা এবং রায়দিঘি-সহ বিভিন্ন বন্দর থেকে প্রায় সাতশোর মতো ট্রলার ইলিশ ধরতে সমুদ্রে পাড়ি জমাচ্ছে।
গত বছর ইলিশের আকাল থাকলেও চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়েছে সুন্দরবন ও জেলার ট্রলারগুলিতে। তবে এত ইলিশে চাহিদা মেটেনি রাজ্যবাসীর। আগামী দু’মাস মাছ ধরা চললে আরও ১ হাজার টন ইলিশ মিলবে বলে আশা করছেন মৎস্যজীবীরা। সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘গত বারের তুলনায় বেশ ভাল পরিমাণ ইলিশ উঠলেও তা আশানুরূপ নয়। তাই এখন বাজারে প্রচুর ইলিশ ঢোকার আশা নেই। তবে আগামী দু’মাস সমুদ্রে ভাল মাছ উঠলে দুর্গাপুজোর মুখে ইলিশের জোগান বাড়বে৷’’ জেলার সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) পিয়াল সর্দারও একই আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় আবহাওয়া খারাপ থাকায় তেমন ইলিশ ওঠেনি। তবে আগামী মাসে আশানুরূপ ইলিশ উঠবে বলে আশা করা যায়।’’
এক দিকে ইলিশের সংখ্যা কম। অন্য দিকে, সমুদ্রে গিয়ে বার বার বিপদের মুখে পড়ছে ট্রলারগুলি। এই জোড়া অশনির হাত থেকে বাঁচতে বুধবার গঙ্গাপুজোর আয়োজন করেছেন মৎস্যজীবীরা। কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরের প্রেক্ষাগৃহে এই গঙ্গাপুজোয় অংশ নিয়েছিলেন মৎস্যজীবী, ট্রলারমালিক, মাঝি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। ছিলেনকাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরাও। তিনি বলেন, ‘‘ইলিশ অনেক কম উঠছে। তার উপর সমুদ্রে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছে ট্রলার। তাই পুরনো রীতি মেনেই মৎস্যজীবী পরিবারগুলি গঙ্গাপুজোর আয়োজন করেছিল।’’