ব্রজ রায় নামের এই বৃদ্ধের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে দেহদানের পথিকৃৎ ব্রজ রায়ের প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা পড়ল স্বাস্থ্যভবনে। এই প্রথম রাজ্যে গবেষণার জন্য করোনা আক্রান্তের প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এল। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কোন পথে ভাইরাস শরীরে সংক্রমণ ছাড়িয়ে মৃত্যু ডেকে আনে, তার হদিশ এই ময়নাতদন্তে মিলেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। এই গবেষণার জন্য মৃতের শরীরে একাধিক অংশের বায়োপ্সি করে দেখা হয়। খতিয়ে দেখা হয় হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্ক। করোনার ফলে ফুসফুস এবং কিডনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
করোনা শরীরে প্রবেশ করে প্রথমেই ফুসফুসে আক্রমণ করে। এই সংক্রমণের কথা প্রথম থেকেই চিকিৎসকরাও বলে আসছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে ফুসফুসের পরই করোনা আক্রমণ হানে কিডনিতে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে দেহে স্বাভাবিক রেচন ক্রিয়া ব্যাহত হয়। শরীরের অন্য অংশেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের নেতৃত্বে থাকা আরজি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজির প্রধান চিকিৎসক সোমনাথ দাস জানান ‘‘ ফুসফুস সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। কিডনি খারাপ হওয়ার ফলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বাড়ে। পেটের ভিতরেও উল্লেখযোগ্য বদল লক্ষ করা গেছে। করোনার জন্যই আলসার হয়ে যাচ্ছে।’’
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
রাজ্যে করোনায় মৃত ব্রজ রায়ের প্রথম প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ১৩মে। রাজ্যে দেহদানের কাজে যুক্ত সংস্থা ‘গণদর্পণ’-এর তৎপরতায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। ‘গণদর্পণ’-এর সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায় বলেন ‘‘ ব্রজ রায় সব সময় দেহদান নিয়ে কাজ করে গেছেন। মৃত্যুর পরও করোনা গবেষণায় রাজ্যে পথ খুলে দিয়ে গেলেন তিনি। করোনা এবং মিউকরমাইকোসিসে মৃত দেহ নিয়ে যত বেশি গবেষণা হবে, তত দ্রুত এই ভাইরাস-আতঙ্ক থেকে মুক্তির পথ মিলবে।’’ উল্লেখযোগ্য বুধবার করোনায় মৃত আরও এক ব্যক্তি অপূর্ব ঘোষের প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। যত বেশি করোনায় মৃতের ময়নাতদন্ত হবে, গবেষণায় তত বেশি তথ্য উঠে আসবে বলে মত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।