দমকল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রস্তাবে সিলমোহর দিল রাজ্য। —ফাইল ছবি।
হামেশাই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এই অবস্থায় দীর্ঘদিনের প্রস্তাবিত দমকল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রস্তাবে সিলমোহর দিল রাজ্য। সূত্রের খবর, প্রযুক্তির প্রয়োগ ও কেন্দ্রীয় ভাবে নজরদারির আওতায় দমকল ব্যবস্থাপনাকে আনতে বরাদ্দে ছাড়পত্র দিয়েছে নবান্ন। এর সঙ্গে মানানসই ব্যবস্থা হিসাবে নতুন ভবন তৈরির জন্য দমকলের ছাড়পত্র পেতে সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বাধ্যতামূলক করার পথেও হাঁটতে চলেছে রাজ্য।
প্রস্তাব রয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র দমকল ব্যবস্থার সঙ্গে ‘সিম’ নির্ভর ‘ওয়াকিটকি’ প্রযুক্তি চালু হবে। ফলে, প্রত্যেক দমকলকর্মী কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন ও আগুনের ভিডিয়োও সরাসরি সম্প্রচারিত হবে সেই যন্ত্রের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ভাবে একটি কন্ট্রোল রুমে সেই সম্প্রচার পৌঁছলে সেখান থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। চলতি বছর পুজোর সময়ে এই ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে দমকল দফতর। পরীক্ষা সফল হওয়ার পরে তাতে সিলমোহর দিয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যভিত্তিক মূল কন্ট্রোল রুমে রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকে আগুনের পরিস্থিতির ‘রিয়েল টাইম’ তথ্য পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার আগুনের তীব্রতা বুঝে দরকারে আশপাশের এলাকা থেকে জলের গাড়ি বা দমকলকর্মী পাঠানো হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি বিষয় চোখের সামনে থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে যেমন সুবিধা হয়, তেমনই চটজলদি পদক্ষেপের কারণে প্রাণ ও সম্পত্তিহানিও অনেকাংশে ঠেকানো সম্ভব। রাজ্যে এখন ১৬০টি দমকল কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলির অবস্থান মাথায় রেখে বিষয়টি সাজানো হচ্ছে।
এক কর্তার কথায়, “শীঘ্রই এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। নতুন যে ভবন বা বহুতল তৈরি হচ্ছে, সেখানে আগামী দিনে বাধ্যতামূলক ভাবে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। তবেই মিলবে দমকলের ছাড়পত্র। কারণ, সেখানে ইন্টারনেট না থাকলে এই পদক্ষপগুলি করা সম্ভব নয়।”
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে বাজার এলাকাগুলিতে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সব এলাকায় আগুন লাগলে স্বল্প পরিসরে দমকল কাজ করার মতো সুযোগ পাচ্ছে না, এ নিয়েও সতর্ক করেন তিনি। আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই ধরনের ক্ষেত্রগুলিতে কী ভাবে আগুনের মোকাবিলা করা সম্ভব, তা কন্ট্রোল রুমে দেখে অভিজ্ঞ আধিকারিকেরা দমকল কর্মীদের পরামর্শ দিতে পারেন।
পুরো পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে পৃথক ভাবে প্রশিক্ষণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। প্রত্যেক দমকল কেন্দ্রে স্মার্ট-ক্লাস তৈরির পরিকল্পনাতেও ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, বেহালায় একটি মাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে লোকবলের অভাবও রয়েছে। ফলে স্মার্ট-ক্লাস তৈরি করা গেলে কেন্দ্রীয় ভাবে কোনও জায়গা থেকে প্রশিক্ষকেরা অনলাইনেই দমকলকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। দরকারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণও প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।