পঞ্চায়েত প্রধান খুনে অভিযুক্ত তৃণমূলের ছয়

নদিয়ার ধনঞ্জয়পুরে পঞ্চায়েত প্রধান খুনে অভিযোগের তির রাতারাতি উল্টো দিকে ঘুরে গেল। সিপিএমের দু’জন নয়, বরং তৃণমূলের ছ’জন এই খুনে জড়িত বলে শনিবার নিহতের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও কেউই ধরা পড়েনি। আজ, রবিবার ১২ ঘণ্টা নাকাশিপাড়া বন্‌ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:১২
Share:

বিচারের দাবি ফিরোজের স্ত্রী ও মেয়ের। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ার ধনঞ্জয়পুরে পঞ্চায়েত প্রধান খুনে অভিযোগের তির রাতারাতি উল্টো দিকে ঘুরে গেল। সিপিএমের দু’জন নয়, বরং তৃণমূলের ছ’জন এই খুনে জড়িত বলে শনিবার নিহতের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও কেউই ধরা পড়েনি। আজ, রবিবার ১২ ঘণ্টা নাকাশিপাড়া বন্‌ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম।

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে জমিজমা নিয়ে গ্রাম্য বিবাদ মেটাতে গেসলে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে খুন করা হয় নাকাশিপাড়ার ধনঞ্জয়পুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান ফিরোজ দফাদারকে (৩৮)। তাঁর বাড়ি ম্যাচপোতা গ্রামে। পশ্চিমপাড়ায় সভার মধ্যেই কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁর উপরে চড়াও হয়। পিটিয়ে-কুপিয়ে পরপর পাঁচটি গুলি করে তারা। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে ফিরোজ মারা যান।

সন্ধ্যায় ফিরোজের এক দূর সম্পর্কিত ভাই নাকাশিপাড়া থানায় সিপিএমেরই দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁদের এক জন পঞ্চায়েত সদস্য আজবাহার আলি শেখ, অপর জন পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী হুড়ো শেখ। পঞ্চায়েত তহবিলের টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই এই খুন বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে দাবি করছিল।

Advertisement

কিন্তু শুক্রবার রাতেই ফিরোজের নিজের ভাই ইজরাফিল দফাদার ফের থানায় গিয়ে সংসার শেখ, আখতার শেখ, জাহাঙ্গির শেখ, ইয়ার শেখ, পিয়ার শেখ এবং ওয়াস শেখ নামে ছ’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। নদিয়ার জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘আগেই একটি লিখিত অভিযোগ হয়ে যাওয়ায় নতুন অভিযোগটিকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তেরা সকলেই পলাতক। তল্লাশি চলছে।’’

ফিরোজের স্ত্রী সুনিফা বিবির অভিযোগ, ‘‘জমিজমা নিয়ে সালিশির নাম করে তৃণমূ‌লের দুষ্কৃতী জাহাঙ্গির শেখ ও তার শাগরেদরা পীড়াপিড়ি করে আমার স্বামীকে পাশের গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, সালিশি সভায় সিপিএমের আরও দুই পঞ্চায়েত সদস্য— তাজবাহার আলি শেখ ও তাজু শেখ হাজির ছি‌লেন। ছিলেন এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী হুড়ো শেখও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, সভা শুরুর মিনিট খানেকের মধ্যেই আচমকা জনা কয়েক দুষ্কৃতী এসে গো‌লমাল পাকায়। আগ্নেয়াস্ত্র ছিল তাদের কাছে। তা দেখে দুই পঞ্চায়েত সদস্য ও হুড়ো শেখ পালিয়ে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু ফিরোজ পালাতে পারেননি। দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘিরে ধরে প্রথমে মাথায় রডের বাড়ি মারে। মুখে ছুরিও চা‌লায়। তার পরে বুকের বাঁ দিকে পরপর পাঁচটি গুলি করা হয়।

প্রথমে সিপিএমেরই দু’জনের নামে অভিযোগ দায়ের হলেও পরে ফিরোজের স্ত্রী ও ভাই দাবি করেন, ঘটনাস্থলে থাকায় অভিযোগপত্রে ওই দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন ফিরোজের তুতো ভাই জেকের আলি শেখ। কিন্তু দু’জনের সঙ্গেই যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল ফিরোজের। তা ছাড়া দুষ্কৃতীরা তাঁদেরও তাড়া করেছিল। এ দিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক নাগাড়ে কেঁদে চলছেন সুনিফা বিবি। বারবার বলে চলেছেন, ‘‘তৃণমূলের জাহাঙ্গিরই এই কাজ করেছে। খুনির শাস্তি চাই।’’

পুলিশেরও একাংশের অনুমান, এই খুনের পিছনে জাহাঙ্গির ও তার দলবলের হাত আছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা ব‌লেন, ‘‘বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে লেঠেল বাহিনীর নেতা হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গিরের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের এ দিনই জেলা আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে পাঠানো হয়েছে।’’ ইজরাফিল দফাদার নিজেও এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন।

খুনের বীভৎসতা দেখে পুলিশের অনুমান, প্রবল আক্রোশের শিকার হয়েছেন ফিরোজ। কিন্তু কেন এত আক্রোশ? স্থানীয় সিপিএম নেতাদের ব্যাখ্যা, নাকাশিপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা তৃণমূলের দখলে থাকলেও ধনঞ্জয়পুর তাদের কব্জায় যায়নি। ফিরোজদের উপরে চাপ তৈরি করতে এর আগে একাধিক বার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনেন তৃণমূল নেতারা। নাকাশিপাড়ার বিডিও হেমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ওই অভিযোগগুলি তদন্ত করে দেখেছি। বেশির ভাগই অসার।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদির অভিযোগ, ‘‘বহু চাপ দিয়েও তৃণমূল ফিরোজকে দলে টানতে পারেনি। তাই দুষ্কৃতী লাগিয়ে খুন করেছে।’’ নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খান অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কী কারণে প্রধান খুন হলেন, জানি না। তবে আমাদের দলের কেউ এতে জড়িত নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement