হাজিরা নিয়ে প্রথম থেকেই কড়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
মুখের কথায় কাজ হচ্ছে না। অর্থ দফতর এ বার লিখিত নির্দেশ জারি করল সরকারি কর্মীদের জন্য। নবান্নে অর্থ দফতরের কর্মীদের হাজিরার ক্ষেত্রে একমাত্র বায়োমেট্রিক পদ্ধতিই ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে চালু হল। গত সোমবার ওই সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের উপসচিব (ডেপুটি সেক্রেটারি) নাভেদ আখতার। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, এত দিন বায়োমেট্রিকের পাশাপাশি খাতায় সই করার সুবিধা বজায় থাকলেও তা এ বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের মে মাসে অর্থ দফতর নবান্নে হাজিরার বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করে। কিন্তু সেই সঙ্গে খাতায় সইয়ের পুরনো ব্যবস্থাও রেখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, অনেক কর্মীই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন না। শুধুই খাতায় সই করছেন। এ-ও দেখা গিয়েছে যে, অন্য কোনও দফতর থেকে যাঁরা বদলি হয়ে নবান্নে এসেছেন, তাঁরা অনেকেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় ‘ডেটা’ দফতরকে দেননি। ফলে তাঁদের বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালুই হয়নি! যাঁরা পদোন্নতির কারণে নবান্নে এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমন দেখা গিয়েছে। এই সব কারণ দেখিয়েই নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে, নবান্নে অর্থ দফতরের সব বিভাগ এবং শাখার সর্ব স্তরের কর্মীদের জন্য একমাত্র বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরাই ‘গ্রহণযোগ্য’ হবে। পদোন্নতি বা বদলি হয়ে যাঁরা নবান্ন আসবেন, যোগ দেওয়ার দিনই তাঁদের বায়োমেট্রিক সংক্রান্ত কাজ করে নিতে হবে। একই ভাবে যাঁরা নবান্ন থেকে অন্য কোনও দফতরে চলে যাবেন, তাঁদের বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা বন্ধ করার কথা আগাম জানাতে হবে। অর্থ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সকলকে বার বার বলা হলেও গত এক বছরে অনেকেই বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা ব্যবহারের সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না। সেই কারণেই এই নির্দেশ। সকলে বায়োমেট্রিক ব্যবহার না করায় মাসের শেষে কর্মীদের হাজিরা সংক্রান্ত রিপোর্ট বানাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। এ বার আর সেই সমস্যা থাকবে না।’’ কবে থেকে ওই ব্যবস্থা চালু হবে, নির্দেশে অবশ্য তার উল্লেখ নেই। ওই আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা তো এমনিতে চালু রয়েছেই। তাই নতুন করে তারিখ জানানোর কিছু নেই। শুধু খাতায় সই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
রাজ্যে সরকারি দফতরে কর্মসংস্কৃতি মজবুত করতে প্রথম থেকেই কড়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা ধর্মঘটে সরকারি দফতরে সর্বাধিক কর্মীর হাজিরা নিশ্চিত করতে অনেক ব্যবস্থাও নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল, কলেজেও শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের হাজিরা এবং সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করতে কড়া মনোভাব দেখিয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন দফতর। যদিও কোনও জায়গাতেই বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় পুরোপুরি সাফল্য আসেনি। অনেক স্কুলে থাকলেও সমস্ত স্কুলে এখনও বায়োমেট্রিক ‘বাধ্যতামূলক’ নয়। অর্থ দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্মীদের অনিচ্ছাই মূল কারণ। তবে অনেক স্কুলে অভিভাবকদের অভিযোগের জেরে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অনেক হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি এই বিষয়ে নজরদারি চালায়। কিন্তু খোদ নবান্নেই অর্থ দফতর এক বছরের চেষ্টায় পুরোপুরি সাফল্য পায়নি। অগত্যা খাতায় সই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নবান্নে বিভিন্ন দফতরে আচমকা চলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তখন তিনি অর্থ দফতরও পরিদর্শন করেছিলেন। সেই সময়েই কর্মীদের হাজিরা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার পরেও ২৫ শতাংশ কর্মী উপস্থিত বলে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন। এর পরেই কর্মীদের সকাল সওয়া ১০টার মধ্যে হাজিরা এবং বিকেল সওয়া ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকার নির্দেশ মানতে বলা হয়েছিল। সেই বছরেই নবান্নে ‘ফেস রেকগনিশন বায়োমেট্রিক মেশিন’ বসানোর কাজ শুরু হয়।
অর্থ দফতরে কর্মীদের সময়ে হাজিরার সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। এক কর্তা পুরনো কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘কর্মীদের নিয়মে বাঁধার কাজ শুরু হয়েছিল যখন অর্থ দফতরের প্রধান সচিব ছিলেন এইচ কে দ্বিবেদী (পরে যিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব হয়েছিলেন)। তিনি অনেক দিন অফিস শুরুর পর আচমকা হাজিরা খাতা চেয়ে গরহাজিরদের নামের পাশে লাল কালির দাগ দিয়ে দিতেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে তাঁর ছুটি কাটা হত।’’ এমন নানা উদ্যোগেও পুরোপুরি কাজ না হওয়াতেই ২০২৩ সালে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এ বার সেটিই একমাত্র হাজিরার পদ্ধতি হয়ে গেল।