হুমায়ুন কবির।
গত এক দশকে বার বার দল বদলাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তৃণমূল-বিজেপি-কংগ্রেসের টিকিটে বিধানসভা, লোকসভা, জেলা পরিষদে লড়েও জিততে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের টিকিটে থেকে ফের বিধায়ক হলেন হুমায়ুন কবির। ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র ইমনকল্যাণ মুখোপাধ্যায়কে ৪৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে জয়ের হাসি হেসেছেন তিনি। বার বার রাজনৈতিক রং পাল্টানো হুমায়ুন ভোটের কয়েক মাস আগে তৃণমূলে যোগদান করে তাঁর টিকিট পাকা করেছিলেন।
হুমায়ুন ১৯৮২ সাল থেকে রাজনীতি করছেন মুর্শিদাবাদ জেলাতে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কংগ্রেস করেছেন। অধীর চৌধুরীর ‘ছায়া সঙ্গী’ বলে পরিচিতও ছিলেন। ২০১১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে রেজিনগর থেকে প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু অধীরের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হওয়ায় ২০১২ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন প্রতিমন্ত্রী হন হুমায়ুন। তবে ছ’মাস মন্ত্রী থাকার পর উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।
এর পরই তৃণমূল সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয় তাঁর। প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতৃত্বের সমালোচনা করায় দল বিরোধী কার্যকলাপের শোকজ করা হয়। এক পর অধীর চৌধুরীর হাত ধরে কংগ্রেস ফিরে আসেন হুমায়ুন। ২০১৮-য় পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের একটি আসনে লড়াই করতে নামেন। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কংগ্রেসের হয়ে ভোটপর্বের সময়ই প্রার্থীপদ লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান।
তৃণমূলের টিকিটে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হলেন হুমায়ুন কবির।
এর এক মাসের মাথায় কংগ্রেস ছেড়ে দিল্লিতে বিজেপিতে যোগদান করেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয় হাত ধরে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি হয়ে লড়াই করতে নামেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হন। অবশেষে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতা করে বিজেপি ছাড়েন হুমায়ুন। দ্বিতীয় বার যোগ দেন তৃণমূলে। গত বছর বহরমপুরে তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেনের থকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়েছিলেন তিনি।
হুমায়ুন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি ২০০১ সাল থেকে ভোট রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত। আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করলেও যেখানে গিয়েছি,পদত্যাগ করে নতুন দলে নাম লিখিয়েছি। একদা মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতেই আমি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেস গিয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমার ও আমার পরিবারের উপর পুলিশ দিয়ে শুভেন্দুর পরিকল্পনায় হামলা চালানো হয়, তা প্রতিরোধ করতে পারেনি কংগ্রেস। সেই কারণে বিজেপি-তে গিয়েছিলাম।’’ কিন্তু বিজেপি ছাড়লেন কেন? ‘‘হুমায়ুনের জবাব, ‘‘আমি এনআরসি-সিএএ-র বিরোধী। তাই শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়তেই আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার উপর আস্থা রেখে টিকিট দিয়েছিলেন। জয়ী হয়ে তাঁর সেই আস্থার মর্যাদা রাখতে পেরেছি।’’