প্রচার: কার্শিয়াঙে পুরভোটের আগে মিছিলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
সামনে বাজছে ঢোল, তাসা, শিঙা। ঘিঞ্জি পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছে কাতারে কাতারে মানুষ। এগোচ্ছে হুডখোলা জিপও। সেই জিপ থেকেই সর্পিল এবড়ো-খেবড়ো পাহাড়ি পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে নমস্কার করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোকে এক বার দেখতে নিরাপত্তা ভেঙে জিপের কাছে এগিয়ে আসছে অসংখ্য পাহাড়ি মুখ। কেউ কেউ খাদা পরিয়ে দিচ্ছেন অভিষেককে, কেউ দিচ্ছেন ফুল।
জিপে অভিষেকের পাশেই দুই মন্ত্রী— গৌতম দেব এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পুরভোটের প্রচারে শনিবার দুপুরে এ ভাবে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তায় অভিষেককে নিয়ে উন্মাদনা দেখে গৌতমবাবু বলেই ফেললেন, ‘‘আজই তো বিজয় মিছিল হয়ে গেল!’’
তিন দিনের পাহাড়-প্রচার সেরে কলকাতায় ফেরার আগে এই মিছিলের শেষে কার্শিয়াং রেলস্টেশনের পাশে সভাও করেন তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক। পাহাড়ের মানুষকে আশা দিয়ে বললেন, ‘‘করেঙ্গে, লড়েঙ্গে, জিতেঙ্গে।’’ পুরভোটে লড়ে জেতার সাহস জোগাতে বোঝালেন, ‘‘মোর্চা চোখ রাঙালে আপনারাও পাল্টা চোখ রাঙাবেন। বাকিটা আমরা বুঝে নেব।’’
আরও পড়ুন:তিক্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, মুখ্যমন্ত্রীর চিন সফরে না করে দিল কেন্দ্র
বিমল গুরুঙ্গের একদা ডানহাত বলে পরিচিত প্রদীপ প্রধানের নেতৃত্বে তৃণমূল কার্শিয়াঙে পুরভোটের লড়াই করছে। গুরুঙ্গ-তথা মোর্চার আঁটঘাট সবই প্রদীপের জানা বলে পাহাড়ের নেতাদের দাবি। সে কারণে আতঙ্কিত মোর্চা কার্শিয়াঙে লড়াইয়ে দাঁত-নখ বার করছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। সে জন্যই অভিষেকের সভার আগে মিছিলেই স্লোগান উঠল, ‘‘গুন্ডারাজ চলবে না।’’ আর কর্মীদের এই লড়াইয়ে ভরসা দিতে অভিষেকও বললেন, ‘‘সকলে এককাট্টা হয়ে থাকুন। বাইরের কারও নয়, এই লড়াই আপনাদের। ভয় পাবেন না। গণতান্ত্রিক ভাবে মোর্চাকে জবাব দিন।’’
মোর্চাকে জবাব দিতে তৃণমূলের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর বক্তৃতায় ঘুরে ফিরে এসেছে রাজ্যের উন্নয়ন, পাহাড়ে মোর্চার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে গুরুঙ্গদের নিষ্ক্রিয়তা, বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণও। অভিষেক বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ রাতের বেলা ভয় দেখাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে, গুন্ডামি করছে। এ সব আর চলবে না। সীমান্তে সৈন্যরা যেমন দেশের জন্য লড়েন, আপনারাও পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য লড়ুন।’’
অভিষেকের এই অভিযোগের জবাবে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির অবশ্য দাবি, ‘‘কাউকে হুমকি দেওয়া বা মারধরের প্রশ্নই নেই। ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট হবে কার অভিযোগ কতটা সত্যি।’’