তিন দিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে বিধানসভার অধিবেশন। তার আগে এক বিধায়ক চুরির দায়ে নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন। আর এক বিধায়ক কলেজে গোলমালে জড়িয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছেন! তার আগেই অন্য এক বিধায়ক ধর্মঘট করলে বিরোধীদের ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ করার হুমকি দিয়ে বসে আছেন! এক দিকে বিরোধী শিবির এখন আগের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক। তার উপরে নিজেদের শিবিরের বিধায়কদের নিয়ে একের পর এক বিড়ম্বনায় প্রবল চাপে পড়েছে শাসক দল!
বিধানসভার স্বল্পকালীন অধিবেশন শুরু হবে শুক্রবার। কয়েকটি বিল পাশের জন্য এই অকাল অধিবেশন চলার কথা ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অধিবেশন শুরুর আগে প্রথামাফিক কাল, বুধবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই প্রস্তুতি চলার মধ্যেই বিধানসভার বাইরের ঘটনার উত্তাপ অধিবেশনে এসে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে! চুরির অপরাধে নিম্ন আদালত দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলিকে। তাঁর সাজার উপরে শেষ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ মিললেও কেন রায় ঘোষণার পরেই সোহরাবের বিধায়ক-পদ খারিজ হল না, সেই প্রশ্নে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এই বিতর্কের উপরেই বিষফোঁড়ার মতো এসে পড়েছে সোমবার ডায়মন্ড হারবারের কলেজে গোলমালে জড়িয়ে তৃণমূলের আর এক বিধায়ক দীপক হালদারের গ্রেফতারির ঘটনা! তাঁর ঘটনায় আইনত বিধানসভার অবশ্য কিছু করার নেই। কিন্তু শাসক দলের বিধায়কদের আচরণ কী বার্তা দিচ্ছে, সেই নৈতিক প্রশ্ন তুলে অধিবেশন সরগরম করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বিরোধী শিবির। স্নায়ুর চাপ বাড়ছে শাসক পক্ষে!
সাম্প্রতিক নবান্ন অভিযান এবং সাধারণ ধর্মঘটের কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই আক্রমণাত্মক চেহারা দেখিয়েছে বামেরা। তাদের সেই মেজাজের প্রতিফলন এ বার বিধানসভার ভিতরেও দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সিপিএমের এক বিধায়কের কথায়, ‘‘বিধানসভার ভূমিকা এ সব ক্ষেত্রে কী হতে পারে, আমরা জানি। কিন্তু শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের আচরণের জন্য আমরা তো ট্রেজারি বেঞ্চের জবাব চাইতেই পারি!’’ কলকাতায় নবান্ন অভিযান করতে গিয়ে বাধা পেয়ে ধর্মতলায় রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েছিল কংগ্রেস। সেই উৎসাহ ধরে রেখে বিধানসভার অন্দরেও সরকারকে চাপে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। বাম এবং কংগ্রেস, দু’পক্ষই শুক্রবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছে রণকৌশল চূড়ান্ত করার জন্য। এমতাবস্থায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায়েরা চেষ্টা চালাচ্ছেন, ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যেরা যাতে কোনও ভাবেই প্ররোচনায় পা দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে না তোলেন।
স্পিকার বিমানবাবু অবশ্য এ দিনও জানিয়েছেন, সোহরাবের সাজা সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র তাঁর দফতরে পৌঁছয়নি। আর কোনও বিধায়ককে গ্রেফতার করা হলে সেই তথ্য স্পিকারকে জানাতে হয়। দীপকবাবুর গ্রেফতারির পরে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই তথ্যও সরকারি ভাবে তাঁর কাছে আসেনি। স্পিকারের বক্তব্য, ‘‘আমি যা জেনেছি, টিভি দেখে। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দফতরে ছিলাম। তখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য আসেনি। হাতে কাগজপত্র না পেলে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারি না।’’
এরই মধ্যে আবার আর এক প্রস্ত বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অধিবেশন শুরু হবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। যখন কারখানায় পুজো নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিধায়কদের ব্যস্ত থাকতে হবে। অধিবেশন চলবে প্রায় ঈদ পর্যন্ত। একেবারে বেআক্কেলে সরকার ছাড়া কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেয়?’’