সুদেষ্ণা দত্তগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির মিছিলের পাশে সিএএ বিরোধী পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছাত্রীর দিকে রে রে করে তেড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পোস্টার ছিঁড়ে দিলেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। আর সেই কাজ সমর্থন করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘ওর চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য যে, শুধু পোস্টার কেড়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর কিছু করা হয়নি। আমাদের কর্মীদের সামনে আসে কেন? অনেক সহ্য করেছি। আর নয়।’’
সিএএ-র সমর্থনে বৃহস্পতিবার পাটুলিতে দিলীপবাবুর নেতৃত্বে বিজেপির মিছিল হয়। পুলিশ যেখানে ব্যারিকেড করেছিল, তার পাশে ফুটপাথে ‘দিলীপ ঘোষ গো ব্যাক। নো এনআরসি, নো এনপিআর, নো সিএএ’ লেখা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়েছিলেন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের স্নাতক দ্বিতীর্ষ বর্ষের ছাত্রী পাটুলিরই বাসিন্দা সুদেষ্ণা দত্তগুপ্ত। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সিএএ মানা যায় না। তাই প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’’ এমন সময়ে বিজেপি-র মিছিল থেকে অনেকে তাঁর দিকে তেড়ে যান। তাঁর হাত থেকে পোস্টার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেন এক জন। বাকিরা তাঁকে ঘিরে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে চিৎকার করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে দেখা যায় এক জনকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ওই ছাত্রীকে সরিয়ে নিয়ে যায়। দিলীপবাবু সমাবেশে বলেন, ‘‘বাংলা-সহ গোটা দেশে সিএএ হবেই। কারও বাপের হিম্মৎ থাকলে আটকে দেখাক।’’
সুদেষ্ণার সঙ্গে বিজেপি সমর্থকদের আচরণ এবং দিলীপবাবুর মন্তব্যের সমালোচনা করেছে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস সকলেই। রাজ্যের পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘এক জন ছাত্রীর শান্ত গণতান্ত্রিক প্রতিবাদও সহ্য করতে পারছে না বিজেপি! পোস্টার ছেঁড়া ছাড়া আর কিছু করা হয়নি, এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দিলীপ ঘোষ কী বলতে চাইছেন, স্পষ্ট করে বলুন। উনি যে অসভ্য, বর্বর এবং মহিলাদের সম্মান দিতে জানেন না, সেটা সকলে দেখুক।’’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অপদার্থ, অশালীন মানসিকতার মানুষ দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যে বসে বড় বড় কথা বলছেন। মানুষের সামনে দাঁড়ানোর হিম্মৎ ওঁরই নেই।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘দিলীপবাবু ধারাবাহিক ভাবে মহিলা এবং প্রতিবাদীদের সম্পর্কে যা মন্তব্য করে চলেছেন, তাতে এঁরা ক্ষমতায় এলে নারী সুরক্ষার হাল কী হবে, মানুষ তা বুঝে নিক।’’