বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার মহাজাতি সদনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
নগদ সঙ্কট মোকাবিলার উপায় খুঁজতে বৈঠক। কার্যক্ষেত্রে তা হয়ে দাঁড়াল প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, পরিস্থিতি সামলাতে খোদ মন্ত্রীদের আসরে নামতে হল।
ঘটনার সাক্ষী রইল মঙ্গলবারের মহাজাতি সদন। নগদের টানাটানির বাজারে নতুন বছরে চাষিদের থেকে কী ভাবে ধান কেনা যায়, সে সম্পর্কে আলোচনার জন্য এ দিন সেখানে সমবায় সমিতিগুলিকে ডেকেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ও ছিলেন। কিন্তু আলোচনার বদলে সমিতির প্রতিনিধিরা গত বছরের দাম না-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। মন্ত্রীরা নানান আশ্বাস দিয়ে তাঁদের নিরস্ত করলেও সংশয় কাটেনি।
বৈঠকের গোড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ১ নম্বর ব্লকের সাহাপুর সমবায় সমিতির সম্পাদক ধ্রুবচন্দ্র গিরি বলেন, ‘‘গত বছর ৭২ লাখ টাকার ধান কিনেছিলাম। দাম এখনও চুকোতে পারিনি। কারণ, সরকার আমাদের এখনও টাকা দেয়নি।’’ তাঁর প্রশ্ন— বকেয়া না মিটিয়ে ফের ধান কিনব কী ভাবে? বর্ধমানের আউসগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের অমরারগড় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান স্বপন পালও একই প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘খাদ্য দফতরে বারবার গিয়েও গত বারের বকেয়া ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা পাইনি। এখন কী ভাবে ময়দানে নামব?’’
জনা তিনেক প্রতিনিধির মুখে এ হেন অভিযোগ শুনে অন্যদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা আসন ছেড়ে উঠে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাতে থাকেন। প্রবল হই-হট্টগোল শুরু হয়। খাদ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। যদিও প্রতিনিধিদের একাংশ বিশেষ আশাবাদী নন। ‘‘এক বছর গড়িয়ে গেল, টাকা পেলাম না! মন্ত্রীদের কথায় ভরসা রাখব কী করে?’’— বলছেন তাঁরা। এক প্রতিনিধির প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা আমাদের কাছে টাকা পান, তাঁদের কী বলব? পাওনা না-মিটিয়ে ওঁদের কাছে যাবই বা কোন মুখে?’’
এমনিতেই এ বার ধান কেনার পর্ব মাসখানেক পিছিয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় সমবায় সমিতিগুলো কতটা এগিয়ে আসবে, খাদ্য দফতরের অন্দরেও তা নিয়ে বিলক্ষণ সন্দেহ। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ধান কিনতে হয়। সে বাবদ কেন্দ্রের কাছে আমরা ২০০৪ কোটি টাকা পাই। অথচ কেন্দ্র দিয়েছে ৩৫৯ কোটি। তাই সমস্যা হচ্ছে।’’
তবে এক-দেড় মাসের মধ্যে সব বকেয়া মিটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু।