হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে কৃষি বিপণন দফতর। ফাইল চিত্র।
ফলনে খারাপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়লেও, পরে বেশি দাম মেলার আশায় উৎপাদিত আলুর বড় অংশ হিমঘরে মজুত করেছিলেন চাষি, ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পুজোর পর থেকে দাম কমছে। নতুন আলু বাজারে আসার সময় আসছে। এ দিকে, হিমঘরে পড়ে প্রচুর আলু। হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরেও প্রাত সাত লক্ষ টন আলু পড়ে থাকবে, আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে কৃষি বিপণন দফতর। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “হিমঘরে আলু মজুত থাকায় তা বার করার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’’ বাড়তি সময় মিললেও, দাম তলানিতে ঠেকায় লোকসান হবেই বলে দাবি চাষি ও ব্যবসায়ীদের। ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী’ সংগঠন সূত্রে জানা যায়, চলতি মরসুমে প্রায় ৬৪ লক্ষ টন আলু হিমঘরে মজুত হয়েছিল। এখনও পড়ে প্রায় ১২ লক্ষ টন।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত মরসুমে মাঠ থেকে আলু তোলার পরে ভাল দাম মিলেছিল। কিন্তু দাম আরও বাড়বে আশা করে অনেকে হিমঘরে রাখেন। অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি বস্তা আলুর (৫০ কেজি) বন্ড বিক্রি হচ্ছিল ৭০০ টাকায়। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার চাষি সুবল ধাড়ার মতো অনেকেরই আক্ষেপ, ‘‘বাড়তি লাভের আশায় হিমঘরে আলু রেখে চার গুণ লোকসান হচ্ছে। লোভ না করলেই হত!’’
আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবের নতুন আলু ঢুকতে শুরু করলে পুরনো আলু বাজারে পাঠানো আরও সমস্যা হবে। ডিসেম্বরের শেষে ৭-৮ লক্ষ টন আলু হিমঘরেই পড়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’’ সংগঠনের দাবি, ১৯৬১ সালের আইন অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখা নিয়ম। সংগঠনের সম্পাদক বরেণ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখার নিয়ম হলে প্রতি বছর আর উৎকণ্ঠা থাকবে না।’’ উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সমিতির সদস্য মানিক বৈদ জানান, এখনও প্রায় ২০% আলু পড়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক তরুণ ঘোষ জানান, অসম-সহ কয়েক জায়গায় এখনও পুরনো আলু যাচ্ছে। কিন্তু নতুন আলু এসে গেলে তা-ও বন্ধ হবে।
এরই মধ্যে, এ বার গত বছরের থেকে ২৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষের প্রস্তাব রেখেছে কৃষি দফতর। কিন্তু আলুর নিম্নমুখী দর, সার নিয়ে সমস্যার মতো নানা কারণে রাজ্যের অনেক চাষি আলু বীজ কিনে চাষে নামতে গড়িমসি করছেন। ফলে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।