নিহত জওয়ানের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
জামাইষষ্ঠীতে গ্রামে ফেরার কথা ছিল। হয়নি। আর কোনও দিনই গ্রামে ফেরা হবে না দীপক মাইতির। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের প্রত্যন্ত মশাগ্রামের বছর তেতাল্লিশের যুবকটি এখন ‘শহিদ’।
শনিবার দুপুর দু’টোয় দীপকবাবুর স্ত্রী রিক্তা মাইতির ফোনে খবর আসে। ওই দিনই বেলা ১১টা নাগাদ শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কের কাজিগুন্দে ভারতীয় সেনার কনভয়ে জঙ্গি-হামলায় মৃত্যু হয়েছে দীপকবাবুর। ১৩ বছরের মেয়ে রিয়াকে নিয়ে সবংয়ের কালাপুঞ্জা গ্রামে বাপের বাড়িতে রয়েছেন রিক্তাদেবী। তিনি বলেন, “শনিবার সকাল ৮টায় ফোন করেছিল। তখন তো বুঝিনি ওটাই শেষ ফোন।” ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ অশীতিপর বিধবা কনকলতাদেবীও। ঘরের এককোণে মাদুরে শুয়ে গুমরে গুমরে কেঁদে উঠছেন। বৃদ্ধা বললেন, “দেশ আমার ছেলেকে বীর শহিদ বলে চিনবে, এটা গর্বের কথা। কিন্তু আমার কোল তো ফাঁকা হয়ে গেল।’’
পাঁচ ভাই-বোনের অভাবের সংসারে দীপকবাবু পড়েছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রথমে সামান্য জমিতে বাবা-দাদাদের সঙ্গে চাষাবাদ। অভ্যাস ছিল খেলাধুলো ও শরীরচর্চার। ১৯৯৭-তে পাঠানকোটে সিপাই পদে যোগ দেন। ক’বছরেই নায়েক পদে উন্নীত হন। মৃত্যুর ৩ দিন আগে হাবিলদার হিসেবে তাঁর পদোন্নতি হয়েছিল। কাশ্মীরে তিনি কর্মরত ছিলেন ৫৯ নম্বর মিডিয়াম রেজিমেন্টে।
দীপকবাবুর গ্রামের বাড়িতে মা ছাড়াও রয়েছে তিন ভাই ও তাঁদের পরিবার। দীপকবাবুই সংসারের হাল ধরেছিলেন। বছরে বার তিনেক বাড়িতে আসতেন দীপকবাবু। শেষ এসেছিলেন মার্চে। রবিবার দুপুর থেকেই দীপকবাবুর বাড়ির সামনে ভিড় জমে। স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “ওঁর মাকে বলেছি, আপনি রত্নগর্ভা। আপনার ছেলে সবং ও দেশের গর্ব।” দীপকবাবুর ছোট ভাই পুলিশের কনস্টেবল প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “সেজদার মৃত্যু বেদনার ঠিকই। কিন্তু যাঁরা দেশ রক্ষার কাজে নিযুক্ত, তাঁরা তো মৃত্যুকে ভয় করি না। তাই ওর শহিদ হওয়াটা আমাদের কাছে গর্বেরও।”
মশাগ্রামের আরও চার যুবক সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে ছুটিতে বাড়িতে আসা রবীন খাটুয়া বলছিলেন, “আমি তো এক অর্থে দীপকদার সহযোদ্ধা। বীর শহিদের মতো ওঁর এই মৃত্যুতে তাই গর্ব বোধ করছি।’’ সোমবার দুপুরে ফিরবে দীপকবাবুর কফিনবন্দি দেহ। আপাতত সেই অপেক্ষাতেই গোটা মশাগ্রাম।