অর্পিতা বর্মন (রায়)।
পাঁচ বছর অতিক্রান্ত। আবার একটা পঞ্চায়েত ভোট।
বুকের ভিতরে আগুন নিয়ে ঘুরছেন অর্পিতা বর্মন (রায়)। গলার কাছে কান্নাটা দলা পাকিয়ে থাকে তাঁর। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে রবিবার বলেন, ‘‘আমার স্বামী আত্মহত্যা করেননি। ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে কেন উনি আত্মহত্যা করতে যাবেন? সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছি আমরা। পাঁচ বছরেও সুবিচার মিলল না।’’
রাহতপুর হাই মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন রাজকুমার রায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইটাহারের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। চিন্তিত ছিলেন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে। ভোটের দিন অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৪ জুন রাজকুমার রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন। তখনও ভোট পর্ব চলছিল। ১৫ জুন সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের সোনাডাঙিতে রেল লাইনের উপর থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এ ভাবে এক প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যু বহু অনুত্তর প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, আত্মহত্যা করেছেন রাজকুমার। কিন্তু, বুথ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কী করে তাঁর দেহ উদ্ধার হল, সেই প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দেয়। প্রশ্ন কেউ আত্মহত্যা করতে হলে অতদূর কেন যাবেন? ভোটের সে দিন গাড়িও ছিল কম। অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রের খবর, সে দিন ভোটকেন্দ্রে উল্লেখ করার মতো কোনও গন্ডগোল হয়নি। তা হলে সে দিন ঠিক কী হয়েছিল, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পরিবার। রাজ্য পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ২০১৮ সালেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অর্পিতা। সেই মামলা এখনও চলছে।
সেই ঘটনার পরে রাজকুমারকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে রায়গঞ্জে বিক্ষোভ শুরু হয়। তৈরি হয় রাজকুমার হত্যার বিচার চাই মঞ্চ। কারও নাম উল্লেখ না করেই রায়গঞ্জ থানায় অর্পিতা খুনের অভিযোগ এনেছিলেন। অর্পিতাকে জেলাশাসকের দফতরে গ্রুপ-সি পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
অর্পিতার কথায়, ‘‘সরকার থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। ফোনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন, ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। মেয়ে নবমে আর ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।’’ তাঁর দাবি, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন রাজকুমার। তারপরেই সেইঘটনা। তাঁর মতে, এ বার যারা পঞ্চায়েতভোটে ডিউটিতে যাবেন, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে রবিবার কলকাতায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের মিছিলে যোগ দিতে এসেছিলেন রাহতপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শাহিদুর রহমান। জানান, রাজকুমারের দেহ রেললাইনের ধারে পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান। বলেন, ‘‘এতদূরে কেন রাজকুমার আত্মহত্যা করতে যাবেন? ১৪ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফোন চালু ছিল। পরের দিন দেহ উদ্ধার হয়। এতক্ষণ ও কোথায় ছিল? সিআইডি তদন্তে এর উত্তর নেই।’’