(বাঁ দিকে) ইডেনে বিরাট কোহলিকে আলিঙ্গন ঋতুপর্ণে। বাড়িতে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ঋতুপর্ণ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
আইপিএলের ম্যাচ চলার সময় ইডেন গার্ডেন্সের নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে মাঠে ঢুকে এবং বিরাট কোহলির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ পাখিরা। সেই ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে জামিন পান ঋতুপর্ণ। ভগবানের আসনে স্থান দেওয়া বিরাটকে প্রণাম এবং আলিঙ্গন করার সাধ পূর্ণ হওয়ায় খুশি তিনি। কিন্তু ছেলের নাম মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না বাবা-মায়ের। পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন মিললেও আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা ভেবেই তাঁরা এখন চিন্তিত।
ঋতুপর্ণদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাগ-কালাপাহাড় গ্রামে। পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নয়। বাবা মহাদেব পাখিরা কিছু জমি চাষ করেন। পাশাপাশি এলাকায় তাঁর একটি ফলের দোকান রয়েছে। ইটের দেওয়ালের দু’কামরার নির্মীয়মাণ বাড়ির মধ্যেই মা, বাবা ও কলেজ পড়ুয়া দুই দিদির সঙ্গেই থাকেন ঋতুপর্ণ। তাঁদের বাড়িতে দৃশ্যতই অভাবের ছাপ স্পষ্ট।
ঋতুপর্ণের মা কাকলি পাখিরা পেশায় আশা কর্মী। তিনি বলেন, “উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত শনিবার আমার ছেলে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে ইডেনে যায়। ওই দিন বিরাট কোহলিকে মাঠে দেখে আমার ছেলে আর আবেগ চেপে রাখতে পারেনি।” ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব বলেন, “ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দুশ্চিন্তায় আমার রাতে ঘুম হচ্ছে না। শরীরও খারাপ লাগছে।” ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য বিরাট কোহলি, পুলিশ, আদালত সবার উদ্দেশে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
তবে সে দিনের ঘটনার পরে গ্রামবাসীদের কাছে রাতারাতি ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন ঋতুপর্ণ। অনেকেই ঋতুপর্ণের বাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে যাচ্ছেন। ‘ভগবান’ বিরাটের কাছে কী আবেদন রাখবেন? প্রশ্ন শুনেই তাঁর ঝটিতি উত্তর, “আমি ক্রিকেট খেলে অনেক বড় জায়গায় যেতে চাই। তার জন্য ভাল জায়গায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ যদি আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার করে দেন তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।”
কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত শর্তসাপেক্ষে ঋতুপর্ণের জামিন মঞ্জুর করে। জামিন মঞ্জুর করার পর সোমবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। ঋতুপর্ণের মা বলেন, “জামিন মিললেও মামলা এখনও ঋতুপর্ণের ঘাড়ে ঝুলে রয়েছে। এই বিষয়টি আমাদের খুবই দুশ্চিন্তায় রেখেছে।”