বিষমদ কাণ্ডে দৃষ্টিহীন কাশীনাথ ঘোষ ও তাঁর পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
টালির চালের ঘুপচি ঘরে অনটনের চিহ্ন স্পষ্ট। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুর পরে সেই ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি পরিবার। মৃত মইনুদ্দিন জমাদারের স্ত্রী তামিনা বেওয়া জানালেন, কলকাতায় গিয়ে ভাঙাচোরা জিনিস কেনাবেচা করতেন স্বামী। বাড়ি ফেরার পথে মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। সেই অভ্যাসই ‘কাল’ হল। মগরাহাট বিষমদ কাণ্ডে মারা যান মইনুদ্দিন। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৯৩ জনের। শনিবার আলিপুর আদালত এই মামলায় মূল অভিযুক্ত নুর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আজ, সোমবার সাজা ঘোষণা। বাদশার কঠোর শাস্তি হোক, চাইছেন তামিনা।
মন্দিরবাজারের নিশাপুর পঞ্চায়েতের উত্তর ঝাপবেড়িয়া গ্রামে থাকেন তামিনা। জানালেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে পড়েছিলেন অথৈ জলে। সরকারি ক্ষতিপূরণের ২ লক্ষ টাকা জমা হয়েছিল ডাকঘরে। সেখান থেকে মাসে মাসে ১২০০ টাকা করে পান। এ ছাড়া, আনাজ বিক্রি করে, দিনমজুরি করে সংসার সামলাচ্ছেন। ছেলেরা ছোট। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ওই গ্রামেই থাকতেন ইউসুফ আলি গাজি। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ইউসুফও মদের বিষক্রিয়ায় মারা যান। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্ত্রী আনোয়ারা বিবি বাপের বাড়িতে চলে যান। ইউসুফের মা রিজিয়া বিবি বলেন, ‘‘ছেলে ভ্যান চালাত। রাতে ফেরার সময়ে মদ খেয়েই ফিরত। ওই রাতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যায়। আমরা চাই বাদশার কঠিন সাজা হোক।’’
বিষমদ খেয়ে প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। কেউ কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। কথা হচ্ছিল ঝাপবেড়িয়া গ্রামেরই কাশীনাথ ঘোষের সঙ্গে। বিষাক্ত চোলাই খেয়ে দু’চোখেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। আগে ভাড়ার মোটর ভ্যান চালাতেন। এখন আর কোনও কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী টুম্পা জানালেন, পান-বিড়ির ছোট্ট দোকান করেছেন স্থানীয় লোকজনের সহায়তায়। সেখান থেকে যে সামান্য আয় হয়, তাতেই চলছে সংসার। প্রতিবন্ধী ভাতার ১২০০ টাকা মাসে মাসে পাচ্ছেন বলে জানালেন।
মগরাহাট এবং সংলগ্ন এলাকার গ্রামে গ্রামে এমন বহু পরিবার এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিষমদ-কাণ্ডে স্বজনহারানোর শোক ভোলেননি তাঁরা। চাইছেন, আদালতে কঠোর শাস্তি হোক খোঁড়া বাদশার।
মগরাহাটের বিলন্দপুর গ্রামে বাড়ি বাদশার। চোলাই মদ বিক্রি করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল দীর্ঘদিন ধরে। তবে সে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এলাকায় চোলাই মদের ঠেক এখন অনেক কম, জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাদশার ছেলে আমির হোসেন ফকির বলেন, ‘‘গতকাল বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। শুধুই কেঁদে চলেছে। সাজা ঘোষণার সময়ে থাকব আদালতে। জানি না, কী আছে ভাগ্যে!’’