প্রিয়জনদের প্রতীক্ষায় প্রার্থনা পরিবারগুলিতে

চারপাশ জল থইথই। বিদ্যুৎ নেই। ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে চাল, আনাজ। তাই একবেলা খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার গোড়ামহল গ্রামের যুবক প্রশান্ত মিদ্যা। বছর আঠাশের প্রশান্ত রয়েছেন এর্নাকুলম শহরের কলমেশ্বরী এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৭
Share:

সাহায্য: কেরলে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ। রবিবার শ্যামবাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

কাজের সূত্রে কেরলে গিয়ে বন্যায় আটকে পড়ছেন এ রাজ্যের অনেকে। কারও দ্রুত ফুরোচ্ছে খাবার, কারও টাকা।

Advertisement

চারপাশ জল থইথই। বিদ্যুৎ নেই। ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে চাল, আনাজ। তাই একবেলা খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার গোড়ামহল গ্রামের যুবক প্রশান্ত মিদ্যা। বছর আঠাশের প্রশান্ত রয়েছেন এর্নাকুলম শহরের কলমেশ্বরী এলাকায়। শহরে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে সেই প্রকল্পেই কাজ করছেন প্রশান্ত। সপ্তাহ দুয়েক আগে একবার বাড়ি ফিরেছিলেন। স্ত্রী, বছর আড়াইয়ের শিশুকন্যা, বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে দিন দশেক আগে ফের যোগ দিয়েছেন কাজে। রবিবার ফোনে প্রশান্ত বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে কাজ বন্ধ। আমাদের থাকার টিনের চাল দেওয়া বাড়িটি একটু উঁচু জায়গায় হওয়ায় কোনওরকমে রয়েছি।’’ শহরের রাস্তাঘাট এক মানুষ উঁচু জলে ডুবে রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। পানীয় জল আনার সুযোগ নেই। প্রশান্তের কথায়, ‘‘চাল, আনাজ শেষ হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার থেকে দিনে একবার খেয়ে কাটাচ্ছি।’’

এক সপ্তাহ ঘরবন্দি হয়ে ছিলেন কোচবিহারের দিনহাটার বাত্রীগছের রাহান সরকার, সাদিয়ার মিয়াঁ, আনারুল মিয়াঁ, মানু মিয়াঁরা। এ দিন ট্রেনের টিকিট কেটে কোনও ভাবে পৌঁছন কল্লম স্টেশনে। তবে বাতিল হয়েছে ট্রেন। তাই ইদে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কল্লমের কুন্দরা থেকে ফোনে রাহান বলেন, “বৃষ্টি থামছেই না। ইদে ফেরা হবে না।’’

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, কেরল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের ফেরাতে রাজ্য সরকার দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে বাড়তি ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেছিল। রবিবার এর্নাকুলম থেকে সাঁতরাগাছি বা হাওড়া পর্যন্ত দুটি করে ট্রেন চালু হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা এবং রাত ৯টায় এই ট্রেন এর্নাকুলম থেকে ছাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল।

কেরল এখন এতটাই বিপর্যস্ত যে অনেকে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতেই হিমশিম খাচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার প্রায় একশোজন কেরলে গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। তাঁদের মধ্যে নতুনগ্রামের আফসার শেখ, নাসির শেখ ও হাবিব শেখ শনিবার ফিরেছেন। সকলেই জানালেন, পাঁচদিন ধরে শুকনো খাবার খেয়েছিলেন। বাড়তি টাকা গুনে ভাড়া গাড়িতে চেন্নাই পৌঁছে ট্রেন ধরেন। অনেকেরই টাকা ফুরিয়ে আসছে। ফলে, বা়ড়ি ফেরা নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বড়জোড়ার চাঁদাইয়ের দাউদ খান, ইঁদপুরের বাসিডির তাপস পাত্র ও পীযূষ পাত্র কেরলে আটকে রয়েছেন। দাউদ বাড়িতে জানিয়েছেন, তিনি ত্রাণ শিবিরে আছেন। তাপস ও পীযূষের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ইঁদপুরের পুলিশ। তাঁরাও নিরাপদে রয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের কান্দি, বেলডাঙা কিংবা ডোমকলের বহু ঘরে এখন উদ্বেগের অন্ত নেই। বাড়িরা ছেলেরা কেরলে গিয়েছেন কাজ করতে। কিন্তু তাঁরা কোথায় কাজ করেন, কেমন আছেন জানেন না পরিজনেরা। ডোমকলের হাবিবা খাতুন যেমন। ছোট্ট আলফাজ়কে কোলে নিয়ে আছেন বটে, তবে কানে ফোনটা ধরে রেখেছেন।যদি এক বার লাইনটা লেগে যায়’, নিজের মনেই বিড় বিড় করে চলেছেন। তিন দিন ধরে এক বার অন্তত ধরতে চাইছেন স্বামী মনিরুল ইসলামকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement