জাল ইনজেকশন তৈরি করা হয়েছিল। — প্রতীকী চিত্র।
শহর থেকে জেলা, সর্বত্রই একের পর এক জাল ওষুধের খোঁজ মিলছে। কখনও ওষুধের গুদাম কিংবা দোকানে, কখনও আবার খাস হাসপাতালেই মিলছে সেই জাল ওষুধ। শেষ কয়েক মাসে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল এবং ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ (সিডিএসসিও) কয়েক লক্ষ টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করেছে।
সম্প্রতি উল্টোডাঙার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হানা দেন কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকেরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা অ্যালবুমিন ইনজেকশনের পাঁচটি ভায়াল বাজেয়াপ্ত করেন। নামী একটি সংস্থার তৈরি ওই দামি ইনজেকশন বড়সড় কোনও আঘাতে, রক্তক্ষরণ বন্ধে, পুড়ে যাওয়ার ক্ষত সারাতে এবং বড়সড় কোনও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। জানা যাচ্ছে, ওই সংস্থা জানতে পারে, তাদের সব কিছু নকল করে জাল ইনজেকশন তৈরি করা হয়েছে এবং কলকাতার বাজারেই তা পাওয়া যাচ্ছে। এর পরেই ওই সংস্থার তরফে বিষয়টি সিডিএসসিও-কে জানানো হয়।
সিডিএসসিও-র পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর থেকে এই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। এর পরেই তাঁরা সূত্র মারফত খবর পেয়ে হানা দেন ওই বেসরকারি হাসপাতালে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকদের দাবি, অ্যালবুমিন ইনজেকশনের ওই পাঁচটি ভায়াল যে জাল, তা জানতেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ওই ইনজেকশনগুলি তাঁরা কিনেছিলেন বেলেঘাটার এক ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে। এর পরে সেই সূত্র ধরে বেলেঘাটায় পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকেরা। ওই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁরা জানতে পারেন, মেহতা বিল্ডিংয়ের এক পাইকারি ব্যবসায়ীর থেকে তিনি ওষুধ কেনেন। বড়বাজারের ওই ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে আধিকারিকেরা জানতে পারেন, তিনি ওষুধ কেনেন মুম্বইয়ের এক সংস্থা থেকে।
কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রের খবর, ওই হাসপাতাল, ডিস্ট্রিবিউটর, পাইকারি ব্যবসায়ী— সকলের কাছ থেকেই ওই ওষুধ কেনাবেচা সংক্রান্ত কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। যা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বিষয়টি সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও। মঙ্গলবার আচমকাই বাগড়ি মার্কেট, মেহতা বিল্ডিং-সহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে হানা দেন ড্রাগ কন্ট্রোলের ইনস্পেক্টরেরা। মোট ১৯ জনের একটি দল ছ’টি দলে ভাগ হয়ে এই অভিযান চালায়। বিভিন্ন পাইকারি দোকানে ঢুকে রক্তচাপ, অ্যান্টিবায়োটিক, সুগার-সহ আরও কিছু জীবনদায়ী ওষুধ পরীক্ষা করেন ওই আধিকারিকেরা। সন্দেহজনক ওষুধগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।