প্রতীকী ছবি
অভিসন্ধি যে নিছক প্রতারণার নয়, তার চেয়েও গুরুতর, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় কলকাতার ভুয়ো কলসেন্টার নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে এনআইএ বা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। তারা জেনেছে, মহানগরে ভুয়ো কলসেন্টার খুলে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণা করে আদায় করা অর্থ ঘুরপথে গিয়েছে লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গি সংগঠনের কাছে! ওই টাকা ‘টেরর ফান্ডিং’ অর্থাৎ ত্রাস-তহবিলে সাহায্য করছে। এই ভয়ঙ্কর তথ্য জেনেই ওই সব কলসেন্টারের উপরে নজরদারি শুরু করেছে এনআইএ।
সূত্রের খবর, গত বছর এনআইএ জানতে পারে, লস্করকে অর্থসাহায্য করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা তুলেছে লস্কর-সদস্য, জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা আরশাদ আহমেদ, খুররম পারভেজ। টাকা পাঠিয়েছে বিহারের গোপালগঞ্জের জাফর আব্বাস। অভিযোগ, তার নির্দেশে কলকাতার বন্দর এলাকায় ভুয়ো কলসেন্টার খুলে টাকা তোলা হত। লস্করের সদস্য জাফর সেই টাকা পাঠিয়েছে খুররমের কাছে। সেই টাকা বিভিন্ন জায়গায় লস্করের হামলা, গুরুত্বপূর্ণ স্থান, নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয়।
এনআইএ জানিয়েছে, কলকাতার ওই কলসেন্টার চালাত বন্দর এলাকার হাইড রোডের রামভবন প্রসাদ ও ময়ূরভঞ্জ রোডের চন্দন মাহাতো। গত ডিসেম্বরে তাদের গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। অভিযোগ, মোবাইল টাওয়ার বসানো, বিমা, সস্তায় বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি ও ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তারা কলসেন্টার থেকে সাধারণ মানুষকে ফোন করত। এই সব কাজের জন্য প্রসেসিং ফি বাবদ নিত ২০-৩০ হাজার টাকা। ওই দু’জনের কাছ থেকে হাজারখানেক ভুয়ো ব্যাঙ্ক আকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর সিমকার্ড, ভুয়ো এটিএম কার্ড। প্রতারণার কাজে সেগুলি ব্যবহৃত হত বলে অভিযোগ।
একাধিক এটিএম কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন এটিএম থেকে টাকা তোলার অভিযোগে গত জুনে চন্দন ও রামভবনকে গ্রেফতার করে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশও। জেলে থাকাকালীন ওই দু’জনের জঙ্গি সংস্রবের প্রমাণ পেয়ে তাদের নিয়ে যায় এনআইএ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্র ও তার বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য অর্থ জোগাড়, সদস্য নিয়োগের মামলায় গত সপ্তাহেই দিল্লির বিশেষ আদালতে চন্দন, রামভবন, জাফর-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে এনআইএ। জানানো হয়, নিষিদ্ধ পাক সংগঠন লস্করকে অর্থ দেওয়া হয়েছে ভুয়ো কলসেন্টারের টাকা থেকে। চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে খুররম, আরশাদ, মুনির আহমেদ ছাড়াও নাম রয়েছে হিমাচল প্রদেশের আইপিএস অফিসার অরবিন্দ দিগ্বিজয় নেগির।
চার্জশিটে এনআইএ-র দাবি, লস্কর নানা জায়গায় হামলার ছক কষছিল। তার জন্য নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য সংগ্রহ করছিল অভিযুক্তেরা। তার জন্য অৰ্থিক মদত পেয়েছিল তারা। এনআইএ সূত্রের খবর, কলকাতার আর কোনও ভুয়ো কলসেন্টার জঙ্গিদের সাহায্য করছে কি না, সেই বিষয়েও নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুলিশের একাংশের মতে, কলকাতা, বিধাননগর, নিউ টাউনে রমরমিয়ে চলছে ভুয়ো কলসেন্টারের ব্যবসা। সেখানে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিদেশি নাগরিকেরাও।
এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, জঙ্গিরা এ দেশের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিতে নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জাল নোট ছড়িয়ে দিত। কিন্তু ইদানীং জাল নোটের ব্যবসা ঠিক চলছে না। তাই রমরমিয়ে চলা ভুয়ো কলসেন্টারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সেখান থেকে টাকা তুলে দেশের অর্থনীতিকে বরবাদ করতে চাইছে তারা।