প্রতীকী ছবি।
ওয়েবসাইটে ফোন নম্বর-সহ একটি ‘পোস্ট’। তাতে লেখা— কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এলাকার ‘ফর্টিস হসপিটাল অ্যান্ড কিডনি ইনস্টিটিউট’ কিডনি চাইছে। ইচ্ছুক কিডনিদাতারা যেন যোগাযোগ করেন!
পোস্টটি মাসখানেক আগের। তাতে ফর্টিসের লোগো-ও ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৩ মে, ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে উল্টো দিকের পুরুষ কণ্ঠ ইংরেজিতে জানান, তাঁরা ওই হাসপাতালের তরফে কিডনি কিনতে আগ্রহী। এ জন্য দাতা-কে অস্ত্রোপচারের আগে ৮০ লক্ষ টাকা ও অস্ত্রোপচারের পর আরও ৮০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। ফর্টিস হাসপাতালে থাকতে হবে অস্ত্রোপচারের আগে ৪ দিন এবং পরে ১০ দিন।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই মেল-এ হাসপাতালের নাম দিয়ে ফর্ম এবং নিয়মাবলি চলে এল। ফর্মে দাতার নাম-ধাম-বয়স-পেশা-ফোন নম্বর সব চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে লেখা রয়েছে, একটি কিডনির জন্য ৩ লক্ষ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হবে! ফর্টিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনা সম্পর্কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই। কিন্তু যে ভাবে তাঁদের নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁরা বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন।
টাকার বিনিময়ে কিডনি কেনা এ দেশে বেআইনি। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, রক্তের সম্পর্ক রয়েছে ও রক্তের গ্রুপ মিলছে, এমন লোকের থেকেই কিডনি নেওয়ার কথা। সেটা সম্ভব না হলে ‘আনরিলেটেড ডোনর’ অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কহীন লোকের থেকে কিডনি নেওয়া যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সরকার-গঠিত ‘কিডনি বোর্ড’-এর সদস্যদের অনুমতি প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের সাইটে এই বিজ্ঞাপনের ঘটনা সামনে আসায় স্বাস্থ্যভবনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এই কলকাতাতেই কিডনি পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। মাস দেড়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রসঙ্গ টেনে ওই হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সতর্কও করেছেন। তার পরেই ইন্টারনেটে ফর্টিসের নাম করে এমন কাজকর্মের ঘটনা সামনে এল।
শুধু একটি ওয়েবসাইট নয়। দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বই, পুণের বিবিধ হাসপাতালের নামে একাধিক সাইটে এ ধরনের ‘পোস্ট’ রয়েছে গোছা গোছা। খোলাখুলি চলছে কেনাবেচা, দরাদরি। এর মধ্যে দিল্লির একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের তরফে এক বাঙালি ডাক্তারের নামেও পোস্ট রয়েছে। তাঁকে ফোন করতে ইংরেজি উচ্চারণে এক বিদেশি পুরুষ কণ্ঠ প্রথমে ৮৫০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে বললেন। এর পর নাকি কিডনির বদলে তাঁরা ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দেবেন!
হাসপাতালগুলির দাবি, তাঁদের নাম ও লোগো অপব্যবহার করে একটি চক্র এই ধরনের অপরাধ করছে। লালবাজারের সাইবার ক্রাইম দমন বিভাগে ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন ফর্টিস কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গ জানান, এ ধরনের ঘটনা তাঁর জানা নেই। তবে স্বাস্থ্য দফতর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রতারিত কেউ অভিযোগ জানালে পদক্ষেপ করবে পুলিশ।
প্রশ্ন উঠছে, ইন্টারনেটে নাম, ফোন নম্বর দিয়ে এই রকম চলছে দেখেও কেন পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করবে না? কলকাতা পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, পুলিশ নিজে থেকে মামলা বা তদন্ত শুরু করলেও তা এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘ভিকটিম’ বা ক্ষতিগ্রস্তের অভিযোগ প্রয়োজন হবে।