প্রতীকী ছবি।
বিভাগের একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চক্ষু চিকিৎসক (অপথ্যালমোলজিস্ট) চাকরি ছেড়েছেন। তার জেরে গত জুন মাস থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে সময়ের আগে জন্মানো সদ্যোজাতদের অন্ধ হওয়া আটকানোর লেজার সার্জারি করা যাচ্ছে না। সংক্রমণ এমনকী প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন খোদ চিকিৎসকেরা।
এসএসকেএমের নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধান সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়, এনআরএসের চক্ষু চিকিৎসক সমীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের মতো অনেকেই জানিয়েছেন, যে সব শিশু সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়, তাদের একটা বড় অংশের চোখের রেটিনার সর্বত্র রক্তজালিকা ছড়াতে পারে না। তা ছাড়া, ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’-এ (এসএনসিইউ) শিশুর শরীরে কোনও ভাবে বেশিমাত্রায় অক্সিজেন চলে গেলেও রেটিনা নষ্ট হতে পারে। এর জন্য ২৬-৩৪ সপ্তাহে জন্মানো নবজাতকদের এই রেটিনা নষ্ট হওয়ার হার প্রায় ৭০-৯০ শতাংশ। ফলে জন্মের পরেই চোখ পরীক্ষা করে যাদের দরকার তাদের তৎক্ষণাৎ লেজার সার্জারি করতে হয়।
রাজ্যে একমাত্র এসএসকেএম ও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজেই সদ্যোজাতদের চোখের এই স্ক্রিনিং এবং সার্জারি হয়। নীলরতনে এটি শুরু হয়েছে মাত্র বছর দেড়েক হল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের এসএনসিইউ থেকে সময়ের আগে জন্মানো সদ্যোজাতদের চোখের রেটিনা বাঁচাতে মূলত পিজিতেই রেফার করা হত।
সেই এসএসকেএমেই ইন্ডোর ও আউটডোরে সদ্যোজাতদের এই লেজার সার্জারি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে চোখ বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত কম ওজনের শিশুদের এসএনসিইউ থেকে বার করে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ‘রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’-তে (আরআইও) নিয়ে গিয়ে লেজার সার্জারি করানো হচ্ছে।
সেখানে ‘ডেডিকেটেড’ ওটি বা ভেন্টিলেটরের পরিকাঠামোও নেই। এই ভাবে যাতায়াত ও অস্ত্রোপচারে যে কোনও সময়ে সদ্যোজাতদের মারাত্মক সংক্রমণ এমনকী প্রাণ সংশয় হতে পারে বলে জানিয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবন ও অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছেন এসএসকেএমের নিওনেটোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
সুচন্দ্রাদেবীর কথায়, ‘‘৭০০ গ্রাম, ৮০০ গ্রামের সব বাচ্চা! ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন ‘বেডসাইড’-এ তাদের লেজার সার্জারি করার কথা। চোখ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে তাদেরই কিছুটা স্থিতিশীল করে অক্সিজেন মাস্ক, এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব লাগিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে আরআইও পাঠাচ্ছি। সেখানে ভেন্টিলেটর নেই। পেডিয়াট্রিক সার্জন মজুত রাখতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে। সংক্রমণের ভয় থাকছে। স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছি, সামান্য এ দিক-ও দিক হলে চোখ তো চিরতরে যাবেই উপরন্তু প্রাণ নিয়ে টানাটানি হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের চক্ষু বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহ-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘জুন থেকে পিজিতে লেজার বন্ধ জানি। ওখানকার অন্য এক অপথ্যালমোলজিস্টকে লেজার ট্রিটমেন্টের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি কাজ শুরু করবেন। তখন সমস্যা থাকবে না।’’ এসএসকেএমের নিওনেটোলজিস্টরা কিন্তু জানাচ্ছেন, শুধু প্রশিক্ষণে লাভ নেই। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছাড়া যে কেউ এই কাজ করতে পারবেন না।