টানা দু’বছর বন্ধ থাকার পরে দেশের ছ’টি আনাজের ক্ষেত্রে বিশ্বের দরজা খুলেছে। কিন্তু তাতেও কপাল ফিরল না রাজ্যের চাষিদের। কেন্দ্রের কৃষি মন্ত্রকের নতুন এক নিয়মের গেরোয় রফতানির সেই সুযোগ হারাতে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের আনাজ রফতানিকারীরা।
নতুন নিয়মটি হলো, ভিএইচটি (ভেপারাইজড হিট ট্রিটমেন্ট) অর্থাৎ বাষ্পীয় পদ্ধতিতে শোধন করা না হলে আনাজ বিদেশে পাঠানো যাবে না। এ রাজ্য তো দূর স্থান, পূর্ব ভারতের কোথাও এই ‘ভিএইচটি’ শোধনাগার নেই। ফলে, আনাজ রফতানি থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন এ রাজ্যের কয়েক হাজার চাষি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে উচ্ছে, বেগুন, পটল, করলা, কাঁকরোল এবং চিচিঙ্গা— এই ছ’রকম আনাজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। অভিযোগ ছিল ভারত থেকে পাঠানো ওই সব আনাজে পোকামাকড় থাকছে এবং সেগুলি ফলানোও হয়েছে অত্যধিক কীটনাশক ব্যবহার করে। অনেক তদ্বিরের পরে ২০১৬ সালের শেষে বরফ গলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানায়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তারা ফের ওই ছ’রকম আনাজ আমদানি করবে ভারত থেকে। এর পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে ‘এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (অ্যাপেডা)-র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ‘হট ওয়াটার ইমারশন ট্রিটমেন্ট’ অর্থাৎ গরম জলে শোধন করে আনাজ রফতানি করতে হবে। রাজ্যের এক রফতানিকারী অঙ্কুশ সাহা জানাচ্ছেন, এর পরে চাষিদের থেকে আনাজ সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু, ১৭ মার্চের নতুন নির্দেশিকায় বলা হল, গরম জলে নয়, বাষ্পীয় পদ্ধতিতে ‘ট্রিটমেন্ট’ না করলে আনাজ রফতানি করা যাবে না। এতেই সমস্যায় পড়েছেন রফতানিকারীরা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবিল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সম্পাদক মৃণাল সিংহের বক্তব্য, ‘‘পূর্ব ভারতে একটিও ভিএইচটি শোধনাগার নেই। উত্তরপ্রদেশে দু’টি, মহারাষ্ট্রে দু’টি এবং অন্ধ্রপ্রদেশে একটি শোধনাগার রয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীন ‘রিজিওনাল প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশন-এর রাজ্যের অধিকর্তা রাজকমল শশিহর বলছেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি পূর্ব ভারতে শোধনাগার তৈরি করতে। এখন খারাপ আনাজ বিদেশ পাঠিয়ে যদি রফতানি ফের বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে গোটা দেশের চাষিরাই মার খাবেন।’’