রিষড়া স্টেশনে ঢোকার পরেই কানে এল বিকট শব্দ। ফাইল চিত্র।
এগারো বছরের ছেলেটাকে কোলে আঁকড়ে রেখেছিলাম শক্ত করে। ট্রেনের কামরার বাইরে তখন দেখতে পাচ্ছি আগুনের ঝলক। কানে আসছে বোমা ফাটার শব্দ।
আমার বাড়ি শ্রীরামপুরে। চাকরি করি। সোমবার এক জনকে পড়াতে গিয়েছিলাম উত্তরপাড়ায়। সঙ্গে ছিল ছেলে বিহান। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ উত্তরপাড়া স্টেশনে আসি। মিনিট পনেরোর মধ্যে ট্রেন ঢুকল। তখনও জানি না, সামনে কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করে আছে।
রিষড়া স্টেশনে ঢোকার পরেই কানে এল বিকট শব্দ। কীসের শব্দ বুঝতে পারছিলাম না। সহযাত্রীরা কেউ কেউ বললেন, বোমা ফাটছে। ট্রেনের দরজা-জানলা বন্ধ করে দেওয়া হল। দমবন্ধ পরিস্থিতি। তার মধ্যে আতঙ্ক। ছেলেটা কান্নাকাটি শুরু দিয়েছে তত ক্ষণে। ওকে আর কী বলব, আমি নিজেও তো প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছি! বাড়ি থেকে ফোন আসছিল অনেকের। আমার স্বামী চেষ্টা শুরু করেন, কোনও মতে যদি ট্রেন থেকে আমাদের নামিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু জিটি রোড এবং রিষড়ায় আসার সমস্ত রাস্তা তত ক্ষণে বন্ধ বলে শুনতে পেলাম।
ভাসুরের মাধ্যমে রিষড়ায় তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হল। রাত সওয়া ১টা নাগাদ উনি এবং অন্য এক জন এলেন স্টেশনে। আমরা তখনও ট্রেনেই বসেছিলাম। ভাগ্যিস ওঁরা এলেন। রাতটা ওই বাড়িতে কাটল। মঙ্গলবার সকালে ফিরেছি বাড়িতে।
প্ল্যাটফর্মে কোনও পুলিশ চোখে পড়েনি সে দিন। আমাদের কাছে খাবার-জল কিছুই সে ভাবে ছিল না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে কখনও পড়তে হয়নি। ছেলেটার মনের মধ্যে এর কী যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে, কে জানে!