যাদবপুরের প্রাক্তনীদের ফেসবুক পেজ।
প্রতিবাদের যে ভাষা-চিহ্ন গত কয়েক দিনে ফেসবুক ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে, তা এ বার নেমে পড়ল জলপাইগুড়ির রাস্তাতেও।
হোককলরব।
সেই এক হাততালি, পোস্টার, কবিতা-গান, স্লোগান, স্বতঃস্ফূর্ততা হোক কলরব! যাদবপুরের সঙ্গে জড়িয়ে গেল ধূপগুড়িও।
‘হোককলরব জলপাইগুড়ি’।
দক্ষিণ ছাপিয়ে উত্তরে রাতারাতি খুলে যাওয়া ফেসবুক কমিউনিটি, যাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘লাইক’ পড়ে যায় ৪৮৪টি। পিছনে যাদবপুরের প্রাক্তনীরা। পোস্ট হয় কবিতা ‘মার খেয়েছি যাদবপুরে/ চোখ কি আছো বন্ধ করে?’
সেই কমিউনিটি পেজেই আবেদন ছিল মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় দিশারী মোড় থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে অহিংস প্রতিবাদ মিছিল বেরোবে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, যাদবপুরের প্রাক্তনীরা নামলেন পথে। নির্ধারিত সময়ের ঢের আগে থেকে মাঠে ভিড় জমতে শুরু করে। কেউ কালো পোশাক পড়ে, কেউ মুখে কালো রং দিয়ে ‘ছিঃ’ লিখে, কেউ বা মাথায় ‘বহিরাগত’ লেখা ফেট্টি বেঁধে এসেছিলেন।
মিছিল যখন রাস্তায় নামল দু’পাশে ভিড় করে এলেন মানুষ। মিছিল বলল যাদবপুরের পাশে আছি। বলল উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। হাততালি, গান আর স্লোগানে গলা মেলালেন ডান-বাম প্রাক্তন ছাত্র নেতারাও। ধূপগুড়ির ছাত্রীর ধর্ষণ-মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবিও উঠল।
শুধু ফেসবুক পেজ নয়। রাতারাতি ‘জলপাইগুড়ি ছাত্র সমাজ’ নামে মঞ্চও তৈরি হয়েছে। হাতে-হাতে পোস্টার-ব্যানার ছিল তাদের নামেই। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনকেও চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কয়েক জন শিক্ষক সাড়াও দিয়েছেন। মিছিলের উদ্যোক্তাদের অন্যতম সায়ন রায় বলেন, “যাঁরা মিছিলে হেঁটেছে, তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে, তবে সকলেই সেই সব পরিচয় সরিয়ে রেখে শুধু মাত্র যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিলেন। ধূপগুড়িতে ছাত্রীকে খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতেও আমরা লাগাতার আন্দোলন চালাব।”
জলপাইগুড়িতে মিছিল প্রাক্তনীদের। ছবি: সন্দীপ পাল।
দিশারী মোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা দিয়ে ডিবিসি রোড, দিনবাজার ঘুরে ঘণ্টাখানেক বাদে ফের মিছিল ফের দিশারী মোড়েই ফিরে আসে। যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্র সুপ্রিয় মল্লিক বলেন, “দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। জলপাইগুড়িও যে যাদবপুরের পাশে আছে, তার বার্তা দিতেই মিছিলে হেঁটেছি।” ছাত্রী দেবাঞ্জনা দাস বলেন, “যাদবপুর থেকে ধূপগুড়ি যা দেখছি, কেউ প্রতিবাদ করলেই কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। এখনই প্রতিবাদ শুরু না করলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না। তাই পথে মেনেছি।”
গত শনিবারই শিলিগুড়ি শহরে এক মিছিলে ডান-বাম সব সংগঠনের নেতাদের দেখা গিয়েছিল। কাল শহরে ফের মহামিছিলের ডাক দিয়েছে ‘স্টুডেন্টস সলিডারিটি’ নামে একটি সংগঠন। দুপুর ২টোয় বাঘাযতীন পার্ক থেকে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ মিছিল শুরু হবে বলে জানান অন্যতম আহ্বায়ক কল্লোল বাগচী। আর এক আহ্বায়ক দীপক গিরি, যাদবপুরের ঘটনায় ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ার ফলেই এই সংগঠনের জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ এবং ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় নতুন কমিটি গড়ে তদন্তের দাবিতে মিছিল হবে। পরে দাবি সংবলিত সনদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে পাঠানো হবে।
শিলিগুড়ির সমস্ত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের এই মিছিলে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরও যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ডাকা হয়েছে টিএমসিপি বাদে সব ছাত্র সংগঠনকেও। দীপকের কথায়, “যাদবপুর কাণ্ডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পড়ুয়াদের পাশে রয়েছে, এমন খবর এখনও নেই। তাই ওদের ডাকা হচ্ছে না। তবে সংবেদনশীল সবাই স্বাগত।” টিএমসিপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের প্রতিক্রিয়া, “ওই সংগঠনের নামই শুনিনি। তাতে যাওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই।”