কাটমানির পরে জমি-হাঙর!

জমি ফেরত দিলেন সুব্রত

অভিযোগ, সুব্রত তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে বহরমপুরের বানজেটিয়ায় রাজ্য সড়ক লাগোয়া ওই জমি দখল করে ছিলেন। যার বাজার মূল্য এখন দু’কোটি টাকারও বেশি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০৫:৪১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কাটমানির সুতোয় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাওয়া তৃণমূলের গায়ে এ বার জমি হাঙরের ছায়া পড়ল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। জুলুম করে বিরোধীদের দলীয় কার্যালয় দখলের অভিযোগ আগেও ছিল, এ বার নিছকই দলীয় কর্মীদের পিকনিক করার ছলে প্রায় ২৯ শতক জমি দখলের অভিযোগ উঠল প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুব্রত সাহার বিরুদ্ধে।

Advertisement

আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি ওই জমি তাঁকে ফিরিয়েও দিতে হয়েছে। তবে সুব্রত মচকাচ্ছেন না, সাগরদিঘির বিধায়ক বলছেন, ‘‘জমি আমারই। জমি মাফিয়ারা এখন পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে আমার উপরে চাপ দিচ্ছে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’’ শাসক দলের বিধায়ক তিনি, তা সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন তাঁকেই চাপ দিচ্ছে? প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে সুব্রত বলছেন, ‘‘তা কী করব বলুন, চাপ দিচ্ছেই তো!’’

ঘটনাটি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের। অভিযোগ, সুব্রত তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে বহরমপুরের বানজেটিয়ায় রাজ্য সড়ক লাগোয়া ওই জমি দখল করে ছিলেন। যার বাজার মূল্য এখন দু’কোটি টাকারও বেশি।

Advertisement

জমির মালিক জগদীশ ঘোষের দাবি, ‘‘ওখানে পার্কিং লট করা হয়েছিল। পরে দেখলাম তেমন চলছে না। তাই প্লট করে জমি বিক্রি করছিলাম। হঠাৎ খবর এল জমিতে মণ্ডপ খাটিয়ে পিকনিক করছে তৃণমূল।’’ তিনি জানান, গিয়ে দেখেন, বিশাল মঞ্চ, পঞ্চায়েতে জয়ের রেশ ধরে রাখতে সুব্রতবাবু দলীয় কর্মীদের নিয়ে ‘পিকনিক’ করছেন। প্রথমে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, ‘এক দিনের ব্যাপার’ বলে। কিন্তু দিন যত গড়াতে থাকে, জগদীশের দাবি জমি ততই হস্তগত করতে থাকেন ওই তৃণমূল নেতা। জগদীশের কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললেই প্রথমে শুনতে হত ধমক, পরে পুলিশের ভয়। শেষে বলা হল, ‘যা পারেন করে নিন!’’ এর পরেই তিনি বহরমপুর সাবডিভিশনাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে মামলা দায়ের করেন। দিন কয়েক আগে সেই রায় গিয়েছে জগদীশের পক্ষে। আদালত তাঁর জমি চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশও দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বহরমপুর থানার পুলিশ ও মহকুমা ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা হাজির হয়ে ওই জমি চিহ্নিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। জমি চিহ্নিতকরণের সময় আদালতের নির্দেশে সুব্রতর ঘটনাস্থলে থাকার কথা ছিল, নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও সুব্রত সেখানে ছিলেন না।

তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘দলের প্রথম সারির নেতারা যদি এমন গা-জোয়ারি কাজ করেন, তা হলে গাঁ গঞ্জের চুনোপুঁটিরা সুযোগ ছাড়বে!’’ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। পুলিশি নিরাপত্তায় সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে।’’ বহরমপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রিয়ব্রত রাঢ়ী বলছেন, ‘‘আদালত ওই জমি যে পাঁচন জনের বলে চিহ্নিতকরণের নির্দেশ দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার তা করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement