(বাঁ দিকে) বুদ্ধদেব সাউ এবং সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
সমাবর্তন নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যের পর থেকে অপসারিত হয়েছেন বুদ্ধদেব সাউ। শনিবারই তাঁকে অপসারণ করেছেন রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বুদ্ধদেবের মন্তব্য, এখন নিজেকে মুক্ত মনে হচ্ছে।
রবিবার ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুরে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এত দিন মামলার কারণ দেখিয়ে রাজভবন থেকে সমাবর্তন স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার বুদ্ধদেব জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি সম্প্রতি সমাবর্তন হওয়ার দিকেই মত দিয়েছে। সেই মতোই সমাবর্তন হবে। বিষয়টি রাজভবনকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তার পরেই বুদ্ধদেবকে অপসারণ করা হল! ঘটনাচক্রে, বুদ্ধদেবকে একক ভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে মনোনীত করেছিলেন আনন্দ বোস। সেই বোসই তাঁকে অপসারণ করার পর বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘সমাবর্তনের জন্য অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি চলছে। উনি (রাজ্যপাল) কবে বারণ করেছেন? দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করান। আমি চাই তদন্ত হোক। সিবিআই তদন্ত হোক। কে দুর্নীতি করেছে দেখুন!’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘রিলিফ লাগছে! যদি সত্যি হয়, দায় চলে গেল। আড়াই হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে লড়েছি। পড়ুয়াদের কেন ডিগ্রি দেওয়া হবে না?’’
উপাচার্য অপসারণের পর বোসকে বিঁধেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি লেখেন, “উনি (রাজ্যপাল) বিষদাঁত এবং নখ বার করছেন।” রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ব্রাত্যের অভিযোগ মূলত দু’টি। এক, তিনি নির্বাচিত রাজ্য সরকারের পরামর্শকে ‘উপেক্ষা’ করেছেন। দুই, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল, উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়ে তা লঙ্ঘন করেছেন রাজ্যপাল।
প্রতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুরে সমাবর্তন হয়। নীতি মেনে সমাবর্তনের জন্য যাদবপুরে প্রতি বছর কোর্টের বৈঠক করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমতি। কিন্তু এ বছর আইনি জটিলতার কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে অনুমতি দেননি আচার্য তথা রাজ্যপাল। তার পরেই সমাবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। যদিও নির্ধারিত দিনেই সমাবর্তনের কথা জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় রাজ্য শিক্ষা দফতর। এর মাঝেই রাজভবনের তরফে ওই সিদ্ধান্ত।
রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছিল, যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাজ্যপাল। আর সেই কারণেই তিনি সমাবর্তন নিয়ে বৈঠকের অনুমতি দেননি। প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর রাজ্যপালের নির্দেশ ছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে দোষীদের। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। বেকসুর খালাস না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর কোনও পদক্ষেপ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা হয়নি। আর সেই কারণেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজ্যপাল বোস কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি বলে রাজভবন সূত্রে খবর। রাজভবন সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছিল, যত ক্ষণ না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন, তত দিন কোর্ট বৈঠকে বসার অনুমতি দেবেন না রাজ্যপাল। তাঁর অনুমতি ছাড়াই সমাবর্তনের আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বার তা হবে কি না, সেই নিয়ে ফের তৈরি হল অনিশ্চয়তা।