গৌতম মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির সামনেই রাস্তায় ফেলে, পিটিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়েছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর প্রাক্তন জেলা সভাপতিকে। মেদিনীপুর শহরে মঙ্গলবার সকালের ওই মারধরের ঘটনার জেরে, গতকাল রাতে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে গৌতম মিত্র নামের বছর বিয়াল্লিশের ওই যুব নেতার। অভিযোগের আঙুল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।
নিহত গৌতমবাবুর পরিবার সূত্রে খবর, রোজকার মতো গত মঙ্গলবারও সকালে বাজারে যাচ্ছিলেন গৌতমবাবু। মেদিনীপুর শহরের খয়েরুল্লা চকে নিজের বাড়ির থেকে বেরোবার পরপরই তাঁকে ঘিরে ফেলেন তৃণমূলের লোকজন। ওই দলে মেদিনীপুর সদর ব্লকের যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ কর্মকারও ছিলেন বলে অভিযোগ। এর পর বিশ্বজিতের নেতৃত্বেই গৌতমবাবুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন সবাই। চড়-ঘুষি-লাথি কিছুই বাদ যায়নি। মারধরের চোটে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন গৌতমবাবু। পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর খবর পেয়ে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ার দুপুরেই তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল সেখানেই গৌতমবাবুকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গৌতমবাবুর মাথায় রক্ত জমে গিয়েছে। এর পর তাঁর অস্ত্রোপচারও করা হয়। কিন্তু, বহু ক্ষণ কেটে গেলেও সংজ্ঞা ফেরেনি তাঁর। ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও শেষমেশ আর সংজ্ঞা ফেরেনি গৌতমবাবুর। গত কাল রাতেই হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন
বিক্রম-সোনিকা আমার বন্ধু, তবু আজ আমি মুখ খুলছি
কলকাতার হাসপাতালে গৌতমবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
গৌতম মিত্র অবিভক্ত মেদিনীপুরের ডিওয়াইএফআই-এর জেলা সভাপতি ছিলেন একটা সময়। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য ছিলেন। তবে গত ২০১১-র পর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছিলেন গৌতমবাবু। তাঁর ভাই অলোক মিত্রর অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকেরাই আমার দাদাকে পিটিয়ে খুন করেছে।” এর কারণ হিসাবে পরিজনেরা জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগেই শুভঙ্কর দে এবং শম্ভু দে নামে স্থানীয় দুই বাসিন্দার মধ্যে গোলমাল হয়। ওই ঘটনার পর সিপিএম সমর্থক শম্ভুকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন গৌতমবাবু। গৌতমবাবুর পরিবারের অভিযোগ, এতেই চটে যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ কর্মকার। ঘটনার দিন সেই আক্রোশেই দলবল নিয়ে গৌতমবাবুর উপর হামলা চালান বিশ্বজিৎ। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বজিৎ বলেন, “গৌতমবাবুর সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল ঠিকই। তবে আমি তাঁকে মারধর করিনি। নার্ভাস হয়েই রাস্তায় পড়ে যান তিনি। গৌতমবাবুর মারা গিয়েছে শুনে আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে।” বিশ্বজিৎ কর্মকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ স্থানীয় সিপিএম নেতা সারদা চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, “পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।” সিপিএমের এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিলীপ দে বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।”
আরও পড়ুন
আজব যুক্তি দেখিয়ে লালবাতিতে নাছোড় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম
বৃহস্পতিবার এসএসকেএম-এই ময়নাতদন্ত করা হয় গৌতমবাবুর মৃতদেহের। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, মেদিনীপুরে ফিরে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। তবে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।