ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভায় ভোটে জয়ের আভাস পেতেই শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহর। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ বছর পর ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় ফিরছে বিজেপি। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের কাছে হেরে গিয়েছিল বিজেপির রমন সিংহের সরকার। সে দিনের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে ফের গেরুয়াময় হয়েছে গোবলয়ের এই রাজ্য। সেই রাজ্যের বড় অংশের বাঙালি ভোটও এসেছে বিজেপি শিবিরে। জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাঙালি নেতাদের ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহার করার কৌশল কাজে এসেছে। তাই রবিবার ভোটের ট্রেন্ড পরিষ্কার হতেই এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করেন ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। ফোন করে শুভেন্দু এবং সেই রাজ্যে প্রচারে যাওয়া তাঁর বিধায়ক দলকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। ছত্তীসগঢ়ের বাঙালি এবং উদ্বাস্তু বাঙালি ভোট টানতে বাংলার বিধায়কদের ব্যবহারের কৌশল যে কাজে লেগেছে, তা-ও বাংলার বিরোধী দলনেতাকে জানিয়েছেন রমন।
মূলত ছত্তীসগঢ়ের বাঙালি অধ্যুষিত ১১টি আসনের প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির ২৪ জন বিধায়ককে। বাঙালিটোলার সেই ১১টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনেই পদ্মফুল ফুটেছে। ২০১৮ সালের ভোটে বাঙালি অধ্যুষিত ১১টি আসনেই হার হজম করতে হয়েছিল পদ্ম শিবিরকে। তাই এ বার বাঙালি ভোটারদের মন পেতে শুভেন্দু-সহ বিমান ঘোষ, দিবাকর ঘরামি, পবন সিংহের মতো বাংলার বিধায়কদের প্রচারে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত বহু আগেই নিয়েছিল বিজেপি। সঙ্গে উদ্বাস্তু মতুয়াদের ভোট নিশ্চিত করতে প্রচারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা মতুয়া ঠাকুরবাড়ির প্রয়াত বীণাপানি দেবীর বড় নাতী সুব্রত ঠাকুর-সহ মতুয়া সম্প্রদায়ের পরিচিত কবিয়াল বিধায়ক অসীম সরকারকে।
দলীয় নির্দেশ পাওয়ার পরেই ছত্তীসগঢ় বিজেপিকে বিধায়কদের নামের তালিকাও পাঠায় বঙ্গ বিজেপি। ভোটের প্রচারে বিজেপির বাঙালি বিধায়কদের জনসভা এবং পথসভার পাশাপাশি, ছোট ছোট ঘরোয়া বৈঠক এবং নানা কায়দায় জনসংযোগের কৌশল সাজিয়েছিল ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি। বাঙালি এলাকাগুলিতে আবার পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে তারকা প্রচারক হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছিল। বাঙালি অধ্যুষিত অনন্তগঢ় এলাকায় একটি বিশাল জনসভাও করেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে বাঙালি অধ্যুষিত ১১টি আসন বস্তার, বীজাপুর, জগদলপুর, দন্তেওয়াড়া, কোন্টা, চিত্রকোট, অনন্তগড়, কেশকাল, কানকের, কোন্ডাগাঁও সহ-নারায়ণপুর আসনে কংগ্রেসকে জিতিয়ে ভূপেশ বাঘেলকে সরকার গঠনে মদত দিয়েছিলেন বাঙালি ভোটাররা। কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই ভোটাররাই মত বদল করে ফিরে এসেছেন পদ্মশিবিরে। যার ফলস্বরূপ, অনন্তগড়, কানকের, কেশকাল, কোন্ডাগাঁও, নারায়ণপুর, দন্তেওয়াড়া, জগদলপুর সহ-চিত্রকোট আসন কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তবে বস্তার, কোন্টা, বীজাপুর আসন ধরে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস।
ছত্তীসগঢ়ের ফলাফল নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রায়পুরের সব আসনে আমরা জিতেছি। মানা উদ্বাস্তু ক্যাম্প এলাকায় ২০ হাজার ভোট ছিল। সেখানে সব বুথেই বিজেপি জিতেছে। ত্রিপুরায় যে ভাবে বাঙালিরা এগিয়ে এসে বিজেপিকে জিতিয়েছিলেন। ঠিক একই ভাবে ছত্তীসগঢ়েও আমাদের জনজাতি সম্প্রদায় মূল বাসিন্দাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, বিশেষ করে ওবিসি সমাজ, ছত্তীসগঢ়ের সাউ সমাজ তাঁরা ঢেলে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। মোদীজির ওপর আস্থা থেকেই এই জয় এসেছে।’’
উল্লেখ্য, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটও শুভেন্দু-সহ বাংলার বিধায়কদের প্রচারের কাজে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। সেখানে যে সমস্ত আসনে বাংলার বিজেপি বিধায়করা প্রচার করেছিলেন, সেই সব আসনেও জয় পেয়েছিলেন ত্রিপুরার বিজেপি প্রার্থীরা।