—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের গণনা মিটেছে প্রায় ১০ দিন। সূত্রের খবর, এখনও পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের যাচাই করতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনগুলিকে। এমন পরিস্থিতি এর আগে দেখা যায়নি বলেই দাবি করছেন সরকারি অফিসারদের অনেকে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, পুনর্নির্বাচনের দাবির থেকে গণনা সংক্রান্ত বিষয়ে যাচাইয়ের চাপ বেশি। তার উপরে এ বিষয়ে বহু মামলা হাই কোর্টে হয়েছে। তাই ফল প্রকাশিত হওয়ার পরেও কাজ শেষ হয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, অভিযোগের নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলেই এই কাজ চালাতে হচ্ছে।
৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। ১২ জুলাই ফলপ্রকাশ হয়। চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সেই তালিকা পঞ্চায়েত দফতরে পাঠাতে হয় এবং গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই তালিকা প্রকাশ করে সরকার। এ বার কবে সেই গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে তা প্রশাসনের অন্দরেই স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের দিন ভোট লুট, সন্ত্রাস, প্রাণহানির অভিযোগ উঠলেও গণনার দিন পরিস্থিতি তুলনায় শান্ত ছিল। তবে গণনার কারচুপি নিয়ে ভূরিভূরি অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক মামলা হয়েছে আদালতে। অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে খোদ বিডিও-দের একাংশের বিরুদ্ধে। এমনকি, ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল মামলার রায়ের উপরে নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসনের উপরে চাপ অনেকটাই বেড়েছে। তাই এই যাচাই পর্বকে বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রশাসনের অনেকের বক্তব্য, ভোট গণনার ঠিক আগের দিন কমিশন একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ব্যালট কাগজের পিছনে নির্দিষ্ট চিহ্নের ছাপ (ডিস্টিংগুইশড মার্ক) এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকলে তা বাতিল করা হবে। অথচ প্রিসাইডিং অফিসার এবং গণনা-আধিকারিকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ভোটের আগে হওয়া প্রশিক্ষণ পর্বে এ নিয়ে সবিস্তার কিছু বলা হয়নি। ফলে অনেক জায়গায় প্রিসাইডিং অফিসারের দেওয়া সেই চিহ্ন বা সই অমিল ছিল। ভোট মিটে যাওয়ার পরে এমন নির্দেশিকায় স্বাভাবিক ভাবেই জটিলতা তৈরি হয়। তা কাটাতে কমিশনের পরামর্শে হস্তক্ষেপ করতে হয় অনেক জেলাশাসককে। কারণ, কোথাও কোথাও একটি-দু’টির বদলে গোটা বুথের ভোট হওয়া ব্যালট কাগজে সেই চিহ্ন বা সই ছিল না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশিক্ষণ পর্বেই কি গলদ ছিল?
কমিশন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ছিল জেলা প্রশাসনের উপর। ফলে কী ভাবে প্রশিক্ষণ হয়েছে এবং সেখানে কী বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা তাঁদের অজানা। তবে জেলা-কর্তাদেরই একাংশের পাল্টা দাবি, কার্যত প্রস্তুতি ছাড়াই ভোট ঘোষণা হয়েছিল। স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোটের অন্য কাজের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। স্বাভাবিক রীতি মেনে ভোট ঘোষণার আগে থেকে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু করা গেলে সমস্যা এতটা হত না।