লোকসভার ধাক্কা সত্ত্বেও একুশের ভিড় নিয়ে আশাবাদী তৃণমূল

গত লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কার পরে মমতা দলকে ফের আন্দোলনমুখী করতে চেয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০১:২০
Share:

২১শে জুলাই ২০১৮-র ভিড়।—ফাইল চিত্র।

পঁচিশ বছর পরে আরও একবার নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তুলে একুশে জুলাই পালন করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভাপতি মমতার মহাকরণ অভিযানের স্লোগান ছিল, ‘সচিত্র ভোটার কার্ড ছাড়া ভোট নয়।’ তখন নির্বাচন কমিশনের রাজ্য দফতর ছিল মহাকরণেই। সেই আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু ইত্যাদির পরে এই দিনটি মমতা রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে পালন করে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এবার সেই কর্মসূচিতে আরও একবার ফিরে আসছে নির্বাচন কমিশন। গত লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কার পরে মমতা দলকে ফের আন্দোলনমুখী করতে চেয়েছেন। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে এবার তিনি ‘মেশিনে নয়, ব্যালটে ভোট’ দাবি তুলে দলের হাতে আন্দোলনের একটি হাতিয়ার তুলে দিতে চান বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তাঁদের মতে, ব্যালট ফেরানোর এই দাবির মধ্যে দিয়ে তৃণমূলনেত্রী কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনের রাস্তাও খুলে রাখছেন। কারণ মমতার অভিযোগ, বিজেপি এবার ইভিএম মেশিনে কারচুপি করেছে।

Advertisement

তবে সদ্য পেরিয়ে আসা লোকসভা ভোটে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়া তৃণমূলের এবারের একুশে জুলাই সমাবেশ কতটা ‘ব্যাপক’ হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। অন্যান্য বছর বিভিন্ন জেলায় যে ধরনের প্রস্তুতি দেখা যায় এবার তা-ও কিছুটা স্তিমিত। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সমাবেশ এবারও ভিড়ের রেকর্ড গড়বে।

লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে তৃণমূল বিপর্যস্ত। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ আসনে হেরেছে তৃণমূল। সেই কারণে উত্তরের জেলাগুলিতে এই কর্মসূচির বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। জেলা সভাপতিদের তৎপরতায় তা স্পষ্ট। কোচবিহারের জেলা সভাপতি বিনয় বর্মণ বলেন, ‘‘দল তদারকি করলেও এবার কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবেন। অন্য বছরের মতোই জমায়েতের চেষ্টা চলছে।’’ একই কথা বলেছেন জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ও অর্পিতা ঘোষ।

জঙ্গলমহলেও এবার দলের ফল খারাপ হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকলেও প্রস্তুতিপর্বে ততটা সাড়া নেই বাঁকুড়ায়। তৃণমূলের বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল ও বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা জানান, জেলার প্রত্যেকটি ব্লক ও অঞ্চলে জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে ২১ জুলাইয়ের প্রচার করা হয়েছে। শহিদ দিবসের প্রচারে লক্ষাধিক ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি হয়েছে দুই সংসদীয় জেলাতেই। দেওয়াল লিখন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দলের কর্মীদের।’’ পুরুলিয়া জেলা যুব সভাপতি সুশান্ত মাহাতোও দাবি করছেন, ‘‘জেলার ২০টি ব্লকের মধ্যে প্রায় ১৫টিতেই সভা সেরে ফেলেছে যুব সংগঠন। প্রস্তুতি সভা করেছে দলের সংখ্যালঘু সেল, জয়হিন্দ বাহিনীর মত শাখা সংগঠনগুলিও।’’ পূর্ব বর্ধমানের ১৮টি ব্লক ও ৫টি পুর এলাকা থেকে লক্ষাধিক লোক নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঝাড়গ্রামের, জেলার ৮টি ব্লকের ৭৯টি অঞ্চলের মধ্যে এখনও মাত্র গোটা পনেরো অঞ্চলে মিছিল ও প্রকাশ্যসভা হয়েছে। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সর্বত্র যে প্রস্তুতি কর্মসূচি করা সম্ভব নয় তা মানছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিরবাহা সরেনের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার কাছে খবর আছে সব বুথেই কর্মসূচি হচ্ছে।

তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুর। নন্দীগ্রামের জেলায় এ বার লোকসভাতেও দুই কেন্দ্রেই জিতেছে তৃণমূল। তবে অধিকারী গড়েও একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি অন্যান্য বছরের তুলনায় হয়তো একটু ঢিমেতালে চলছে। শহিদ সমাবেশের প্রস্ততিতে কয়েকদিন আগে তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলাস্তরের বৈঠক করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী।

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘২১ জুলাই কোনও সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। সেই কারণেই এই কর্মসূচি থেকেই রাজ্যবাসীর প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার শপথ নেয় তৃণমূল। তাই এই কর্মসূচিতে দলের কর্মীরা মনের টানেই আসেন এবং আসবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement