( বাঁ দিক থেকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র এবং ওম বিড়লা। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
শুক্রবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সম্পর্কে লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, স্পিকার ওম বিড়লা তাঁকে বলেছেন, শুক্রবার বেলা ১২টায় লোকসভার স্পিকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর। তার পরে স্পিকার ঠিক করবেন, সেই রিপোর্ট নিয়ে কোন পথে এগোবে লোকসভা।
বৃহস্পতিবার সুদীপ আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে ওই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে রাখা হয়েছে স্পিকারের কাছে। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, মহুয়াকে লোকসভার কক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনও ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, স্পিকার জানিয়েছেন শুক্রবার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। অর্থাৎ, মহুয়ার সাংসদ পদ থাকছে না খারিজ হচ্ছে, তা শুক্রবারেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বিজেপি নেতারা বলে আসছিলেন, ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগে মহুয়ার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই তা পেশ করা হবে। গত সোমবার শুরু হয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। কিন্তু এর মধ্যে তা পেশ করা হয়নি। এর মাঝে মহুয়ার পাশে যেমন তাঁর দলের সাংসদেরা দাঁড়িয়েছেন, তেমন বিরোধী পরিসরেরও অনেককেই পাশে পেয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। লোকভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী অধিবেশন শুরুর আগেই স্পিকারকে চিঠি লিখেছিলেন এথিক্স কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া সংসদের অধিবেশন বসার আগেই বিজ়নেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকেও সরব হন অধীর। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ এথিক্স কমিটির ‘এক্তিয়ার’ নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। অনেকে মনে করছেন, অধীরের ওই ‘আক্রমণাত্মক’ ভূমিকার কারণেই সোমবার রিপোর্টটি পেশ করা হয়নি। পাশাপাশিই, বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে ওই রিপোর্টের বিরুদ্ধে সংসদ ভবনের চত্বরে স্লোগান দেন। ঘটনাচক্রে, দানিশ এথিক্স কমিটির একজন সদস্য। এর পরেই দেখা যায়, সোমবার লোকসভার আলোচ্যসূচিতে ৫ নম্বরে ওই রিপোর্ট পেশের কথা থাকলেও স্পিকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। ৪ নম্বর আলোচ্যসূচির পরে তিনি সরাসরি ৬ নম্বর আলোচ্যসূচিতে চলে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এথিক্স কমিটি যে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে, তা মোটামুটি সর্বজনবিদিত। কারণ, রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগেই কমিটির একাধিক সদস্য সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, তাঁরা কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। অধীর সেই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা স্পিকারকে লেখা চিঠিতে বলেন, এথিক্স কমিটি কখনওই কোনও সাংসদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে না। এই এক্তিয়ার কেবল রয়েছে লোকসভার স্বাধিকাররক্ষার কমিটির। এখন কৌতূহল হল, এথিক্স কমিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে যে রিপোর্ট পেশ করবে, তাতে তারা কী বলবে? তাদের প্রস্তাবের পরে স্পিকারের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও একই রকম কৌতূহল রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, শুক্রবার বিকেলের আগেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।