জমি জট কাটাতে প্রস্তাব

১০ বছর পরে ফের বারুইপুরের জমির লিজ প্রসূনকে

২০০৬-র মে মাসে ক্ষমতায় ফেরার পর জুলাইয়ে সালিম গোষ্ঠীর সঙ্গে হলদিয়া-নন্দীগ্রাম জুড়ে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার একর জমিতে রাসায়নিক শিল্পতালুক তৈরির চুক্তি করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

রাসায়নিক শিল্পতালুক, এক্সপ্রেসওয়ে, উপনগরী, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক, শিক্ষানগরী-সহ অনেক কিছুই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি আন্দোলনের পর ইন্দোনেশিয়ার সালিম গোষ্ঠীর কোনও প্রকল্পই দিনের আলো দেখেনি। তবে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে থেকে গিয়েছে বেশ কিছু জমি। সেই সময় বারুইপুরে সালিম গোষ্ঠীর হাতে যাওয়া ৯৬ একর জমি প্রায় ১০ বছর পর নতুন করে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। তবে এখন আর সালিম গোষ্ঠীর কোনও উপস্থিতি নেই। তাই প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থার হাতে বারুইপুরের জমিটি নতুন করে লিজ দিতে চলেছে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম।

Advertisement

২০০৬-র মে মাসে ক্ষমতায় ফেরার পর জুলাইয়ে সালিম গোষ্ঠীর সঙ্গে হলদিয়া-নন্দীগ্রাম জুড়ে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার একর জমিতে রাসায়নিক শিল্পতালুক তৈরির চুক্তি করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। পাশাপাশি রায়চক থেকে বারাসত পর্যন্ত ইস্টার্ন লিঙ্ক হাইওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই হাইওয়ের পাশে অন্তত ১০টি স্থানে নানা প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সে সময় সালিমদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিউ কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলমেন্ট (এনকেআইডি) প্রাইভেট লিমিটেডকে বারুইপুরে ৯৬ একর জমি দেওয়া হয়েছিল। মূলত উপনগরীর জন্যই এই জমি দেওয়া হয়। তবে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন এবং পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারানোর পরে শেষ পর্যন্ত ২০০৯-এর জুলাইয়ে বামফ্রন্ট সরকার সালিমদের সমস্ত প্রকল্প বাতিল করে। তার পর সালিম গোষ্ঠীর তৎকালীন প্রতিনিধি ও অংশীদার প্রসূন মুখোপাধ্যায় রাজ্যে কিছু প্রকল্পের চেষ্টা করেছিলেন। তা ফলপ্রসূ হয়নি।

১০ বছর পর সরকার বারুইপুরের জমিটির আইনি জটিলতা কাটিয়ে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থার হাতে দিতে পদক্ষেপ করছে। এ নিয়ে ভূমি দফতর, শিল্প দফতর এবং কেএমডিএ বৈঠক করছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আইনি জটিলতা ঠিক কী? জানা গিয়েছে, বারুইপুরের ৯৬ একর জমিটি কেএমডিএ-র। দীর্ঘকালীন লাইসেন্স ফি নিয়ে বা ভাড়ায় তারা জমিটি শিল্প উন্নয়ন নিগমকে দিয়েছিল। নিগম আবার সেই জমি দেয় প্রসূনদের সংস্থাকে। কিন্তু সেই জমিতে উপনগরী হয়নি। এখন অন্য কোনও প্রকল্প গড়তে হলে প্রসূনের সংস্থা অন্য সংস্থাকে ওই জমির মালিকানা বা সত্ত্ব দিতে পারবে না। কারণ, ওই জমি ব্যবহারের অধিকারই তাদের দেওয়া হয়েছিল। প্রসূনের সংস্থা এখন সরাসরি জমিটি সরকারের থেকে লিজে নিতে আবেদন জানিয়েছে। তারা সেখানে উপনগরীর বদলে লজিস্টিকস হাব, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র এবং সামান্য অংশে আবাসন করতে চায়। এই প্রস্তাবে ভূমি দফতরের আপত্তি নেই। সেই কারণে কেএমডিএ জমিটির মালিকানা ছেড়ে তা শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দিয়েছে। মন্ত্রিসভা তাতে অনুমোদনও দিয়েছে। এ জন্য জমির দাম এবং ‘ক্যাপিটালাইজ়ড রেভিনিউ’ বা যাবতীয় খরচও নিগম কেএমডিএ-কে মিটিয়ে দেবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘খামোকা টাকা নেব কেন?’, বিয়েতে বরের কাছ থেকে বই পেলেন সানজিদা

এর পর নিগম জমিটি প্রসূনের সংস্থাকে ৯৯ বছরের লিজে দিতে চলেছে বলে খবর। তা হলে ওই জমিতে প্রকল্প গড়ে তা বিক্রি করতে পারবে প্রসূনের সংস্থা। জমির মালিকানা পাবেন ক্রেতারা। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিল্প উন্নয়ন নিগমের অনুমতি নিতে হবে। তা না হলে প্রসূনের সংস্থা কাউকে সাব-লিজে জমি দিতে পারবে না, এমন শর্তও থাকছে। পাশাপাশি সরকারের প্রাপ্য অর্থও মিটিয়ে দিতে হবে।

নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘এত দিন ধরে জমি পড়ে ছিল। আইনি জটে প্রকল্প হচ্ছিল না। এ বার তাতে প্রকল্প হলে রাজ্যে লগ্নি হবে। কর্মসংস্থান হবে। সেই কারণেই এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement