‘বেড়ানোর গল্প শোনাবে বলে গিয়েছিল’

সিকিমের ছাঙ্গু লেক দেখে রবিবার বিকেলে গ্যাংটক ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ৩এ মদনমোহনতলা স্ট্রিটের বাসিন্দা সন্দীপ কর ও তাঁর স্ত্রী সোমা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৬
Share:

(বাঁ দিক থেকে) শুভজিৎ বসু, সন্দীপ কর, সূর্যাশিস কর, সোমা কর ও স্নেহাশিস বসু। —নিজস্ব চিত্র।

গোটা পাড়া ভেঙে পড়েছে মদনমোহনতলা স্ট্রিটের বাড়িটার সামনে। এক দিন পরে বুধবারই তো পাহাড় থেকে বেড়িয়ে একসঙ্গে ফেরার কথা ছিল সকলের। তাই ফিরবেনও। তবে অন্য ভাবে। অধিকাংশই কফিনবন্দি হয়ে। দু’জন ছাড়া। যাদের মধ্যে এক জন সাড়ে পাঁচ বছরের শিশু। দুর্ঘটনায় মা-বাবার মৃত্যুর পরে সে বেঁচে গিয়েছে। এ বার তার কী হবে? সোমবার সারা দিন ধরে সেই প্রশ্নই ভেসে বেড়াচ্ছে উত্তর কলকাতার ওই বাড়ির চত্বরে।

Advertisement

সিকিমের ছাঙ্গু লেক দেখে রবিবার বিকেলে গ্যাংটক ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ৩এ মদনমোহনতলা স্ট্রিটের বাসিন্দা সন্দীপ কর ও তাঁর স্ত্রী সোমা। একই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সোমাদেবীর মামা স্নেহাশিস বসু, মামিমা কাকলিদেবী এবং তাঁদের ছেলে শুভজিৎ। শুধু বেঁচে গিয়েছে সন্দীপবাবু ও সোমাদেবীর সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলে সূর্যাশিস এবং স্নেহাশিসবাবুর পুত্রবধূ মহুয়া। ঘটনা জানাজানি হতে রবিবার রাত থেকেই সন্দীপদের পাড়া শোকে মূহ্যমান। সোমবার সারা দিন ধরেই সেখানে শুধু চলেছে স্মৃতিচারণ।

আটত্রিশ বছরের সন্দীপবাবুর কাকা মানসবাবু জানান, সাড়ে পাঁচ বছরের সূর্যাশিসই দুর্ঘটনার পরে সিকিমের সেই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে এক আত্মীয়ার ফোন নম্বর জানিয়েছিল। পরে রাতে সেই আত্মীয়া মানসবাবুদের বাড়িতে ফোন করে খবর দেন। সন্দীপের বাবা আশিসবাবু রাতেই সিকিমের পথে আত্মীদের সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়ে যান। মানসবাবু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে কোনও ভাবে যোগাযোগ করতে পারছিল না। সন্দীপের ছেলেও খুব ঘাবড়ে ছিল। তবে ও-ই আমার এক দিদির নম্বর ডাক্তারদের জানায়। তার পরেই সিকিম থেকে কলকাতায় ফোন আসে।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন মদনমোহনতলার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সন্দীপবাবুর মা স্বপ্নাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অন্যান্য আত্মীয়েরাও। মানসবাবু বলেন, ‘‘সন্দীপ বাড়ির একমাত্র ছেলে। ওদেরও একটিমাত্র সন্তান। আমি অকৃতদার। ওদের নিয়েই আমার জীবন। এ বার সন্দীপদের ছেলেকে নিয়েই আমার সময় কাটবে। বুধবারই তো ওদের সকলের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে সে দিন ওদের নিষ্প্রাণ দেহগুলো বাড়িতে আসবে।’’ সন্দীপবাবুর ছেলে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

সন্দীপবাবুদের এই দুর্ঘটনার খবরে শোকস্তব্ধ তাঁর বন্ধুবান্ধবেরাও। তাঁরা জানান, সন্দীপবাবু আদ্যন্ত মোহনবাগানের সমর্থক ছিলেন। সেই স্মৃতিচারণায় উঠে আসে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার কথাও। রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে পাড়ায় সন্দীপবাবুর বেশ পরিচিতি ছিল বলেই জানান প্রতিবেশীরা। এক প্রতিবেশী তপন মাইতির কথায়, ‘‘মোহনবাগান জিতুক কিংবা হারুক, সন্দীপ সব সময় সে ব্যাপারে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ত। মোহনবাগান হারলে আমরাও ওর সঙ্গে মজা করতাম। কত পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!’’

সন্দীপবাবুর আত্মীয়েরা জানান, হুগলির বন্দিপুরের বাসিন্দা সোমার সঙ্গে তাঁর আট বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি চাকরি করতেন। আত্মীয়েরা জানান, মাস খানেক আগেই সন্দীপবাবুরা সবাই মিলে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মানসবাবুর কথায়, ‘‘যাওয়ার দিন বাচ্চাটা হাত নাড়তে নাড়তে হাসিমুখে গেল। বেড়ানোর গল্প শোনাবে বলে গিয়েছিল। সব শেষ। কিছু ভাবতে পারছি না।’’

মদনমোহনতলা স্ট্রিটে সন্দীপবাবুদের সেই বাড়ির নীচে রয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। ভোটের কারণে সেখানে এমনিতেই লোকজনের যাতায়াত। দুর্ঘটনার খবরকে ঘিরে সেখানে নির্বাচনের কাজকর্ম থমকে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement