তরতাজা: গ্রিন হাউসের চেরি টোম্যাটো। নিজস্ব চিত্র
দেশে তৈরি বিলিতি মদ দেশেই বিক্রি হয়। পশ্চিমবঙ্গে ফলানো কিছু ‘ইংলিশ’ বা বিলিতি আনাজ অবশ্য রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। গ্রিনহাউসে অতি যত্নে তাদের লালনপালন চলছে। তার পরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুবাইয়ের বাজারে।
এ রাজ্য থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের আনাজ ও ফল দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হচ্ছে। তবে রাজ্যের গ্রিনহাউসে উৎপাদিত বিভিন্ন রঙের লেটুস পাতা, চেরি টোম্যাটো, ব্রোকোলি, চাইনিজ বাঁধাকপি, ইংলিশ শশা-সহ বেশ কয়েকটি বিদেশি কৃষিপণ্য বেসরকারি উদ্যোগে রফতানি হল এই প্রথম। রাজ্যের রফতানি ক্ষেত্রে এই নতুন ধারার কৃষিপণ্য আগামী দিনে কৃষকদের কাছে অন্য বাজার তৈরি করতে চলেছে বলেই মনে করছে কেন্দ্রের কৃষিজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ (অ্যাপিডা)।
ঝুঁকি নিয়ে যে-বেসরকারি সংস্থাটি ‘ইংলিশ’ আনাজ উৎপাদন করে রফতানি করছে, তার কর্ণধার শিবনাথ ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা ন’টি পণ্য দুবাইয়ে পাঠিয়েছিলেন। রফতানি করা হয়েছিল মোট ৪২০ কিলোগ্রাম পণ্য। তার মধ্যে রাজ্যের মাটিতে উৎপাদিত সাতটি আনাজ পরীক্ষায় পাশ করেছে। আরও প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম কৃষিপণ্য রফতানির বরাতও তাঁরা পেয়ে গিয়েছেন।
লেটুস, চেরি টোম্যাটো, পাকচই, চাইনিজ বাঁধাকপি, রকেট পাতার মতো কৃষিপণ্য যে-কোনও মাটি বা আবহাওয়ায় ফলানো বেশ কঠিন কাজ। ইউরোপের দেশগুলিতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ধরনের আনাজ ফলানো সহজ। চাহিদাও রয়েছে। স্যালাডে, পিৎজায়, স্যান্ডউইচের মতো খাবারে ভারতে লেটুস, চেরি টোম্যাটো ইত্যাদির ব্যবহার ইদানীং বাড়লেও বিশ্ব বাজারে এই সব আনাজের চাহিদা অনেক বেশি। ভাল দামও পাওয়া যায় সেখানে।
অ্যাপিডা-র পূর্বাঞ্চলীয় শাখার অন্যতম কর্তা রণজিৎকুমার মণ্ডল জানান, গ্রিনহাউস গড়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্য ধারার আনাজ চাষ করে রফতানি বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের প্রকল্পে তাঁরা উৎসাহ দিচ্ছেন।
শিবনাথবাবুরা বজবজের জনা দশেক কৃষককে সঙ্গে নিয়ে মাত্র সাড়ে চার একর জমিতে গ্রিনহাউস তৈরি করে লেটুস, চেরি টোম্যাটোর চাষ শুরু করেন। প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয় একটি পরামর্শদতা সংস্থা। আর সেই গ্রিনহাউসের লেটুস পাতাই পাড়ি দিয়েছে দুবাইয়ে।
রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এ দিন বারাসতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে জানান, উত্তর ২৪ পরগনায় রেকর্ড পরিমাণ আনাজ চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে ব্রোকোলির মতো আনাজও প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই জেলায় ১০০০ টনের মতো ব্রোকোলি উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়াও বিশেষ পদ্ধতিতে লেটুস, চেরি টোম্যাটোর মতো আনাজও ফলানো হচ্ছে। ফলে রফতানির সুযোগ আরও বাড়ছে বলেই মনে করছে প্রশাসন।