প্রায় এক দশক আগে কলকাতা থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছিলেন পরশমল লোঢা। তবে ইদানীং এই মহানগরীতে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সক্রিয়তা ফের বাড়ছিল। মঙ্গলবার লোঢার কলকাতার অফিসে তল্লাশি চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডি)।
পঁচিশ কোটি টাকার বাতিল নোট সাদা করার অভিযোগে ২২ ডিসেম্বর লোঢাকে গ্রেফতার করা হয় মুম্বই বিমানবন্দরে। ইডি সূত্রের খবর, বছর দশেক আগেই কলকাতা থেকে তাঁর যাবতীয় কারবার দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যান পরশমল। কলকাতায় রয়ে গিয়েছে শুধু তাঁর অফিস। এ দিন অবশ্য সেই অফিস ছাড়াও বালিগঞ্জে তাঁর তালাবন্ধ বাড়িতে হানা দেয় ইডি। তদন্তকারীরা দেখেছেন, লোঢা এবং তাঁর পরিবারের অন্যেরা হঠাৎই বছর দুয়েক ধরে ফের কলকাতায় যাতায়াত করছিলেন। ইডি-র ধারণা, কলকাতা থেকে মূল ব্যবসা তুলে নিয়ে গেলেও একটা যোগাযোগ রয়েই গিয়েছিল পরশমলের।
ধৃত ওই ব্যবসায়ীর আদিবাড়ি রাজস্থানের চুরু জেলায়। পরশমলেরা সেখানকার মহাতুলসীর উপাসক ওশোয়াল সম্প্রদায়ভুক্ত। ওই সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের বাস কলকাতায়। তাঁদের সঙ্গে পরশমলের যোগাযোগ থেকে গিয়েছে বলেই মনে করছে ইডি। গত দু’বছর ধরে সেই যোগাযোগ ব্যবহার করে পরশমল এবং তাঁর পরিবার নতুন ভাবে কী করতে চাইছিলেন, তল্লাশিতে পাওয়া নথিপত্রে খতিয়ে দেখে তার হদিস পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
পরশমলকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নয়ডার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা পড়া ৫০ কোটি এবং এক আইনি উপদেষ্টা সংস্থার কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। লোঢার কাছে সূত্র পেয়ে তামিলনাডুর মুখ্যসচিব ছাড়াও শেখর রেড্ডি নামে এক ব্যবসায়ী এবং সেখানকার ওয়্যারহাউস কর্পোরেশনের প্রধান কে নাগরাজনের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের জেরায় আরও কিছু ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বলেছেন লোঢা। তার ভিত্তিতে ইডি আগামী সপ্তাহে দিল্লি এবং দক্ষিণ ভারতের আরও কিছু জায়গায় তল্লাশি-অভিযান চালাতে পারে।
ইডি-র এক অফিসার জানান, জেরায় পরশমল কবুল করেছেন, বিচার বিভাগের অন্দরেও অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর। ‘‘জেরায় পরশমল দাবি করেছেন, বিচার বিভাগে তাঁর এতটাই প্রভাব রয়েছে যে, এক বিচারককে ছ’মাসের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি করা হয়েছিল তাঁরই সুপারিশে। এ-সব দাবি কতটা সত্যি, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে,’’ বলেন ওই অফিসার।