রাজ্যের গরু পাচার চক্রের পাণ্ডা এনামুল হক । নিজস্ব চিত্র।
সাত সংখ্যাটা বোধ হয় বেশ প্রিয় গরু পাচারে অভিযুক্ত মহম্মদ এনামুল হকের। ২০১৭ সালে এনামুল ৭ কোটি টাকা আয়কর জমা দিয়েছিলেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। সে বছরই নভেম্বরে টাকার জোরে সাতঘরা একটি পিস্তলও কিনেছিলেন। ১৩ লক্ষ টাকার ওই পিস্তলের গুণমান দেখে চমকে গিয়েছিলেন কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানার এক পুলিশ অফিসার। আরও চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হয়, আবেদনের মাত্র সাত দিনের মাথায় এনামুলকে লাইসেন্স দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতার তৎকালীন এক পুলিশ কর্তা সেই লাইসেন্স পেতে সাহায্য করেছিলেন বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার। সাধারণ লাইসেন্স প্রাপকেরা যেখানে ২৫ রাউন্ড বুলেট রাখার সুযোগ পান, এনামুলকে ১০০ রাউন্ড বুলেট রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
সিবিআই এখন দেখতে চাইছে, আবেদন করার সাত দিনের মধ্যে পিস্তলের লাইসেন্স এনামুল পেয়েছিলেন কী করে। দ্রুত লাইসেন্স পাওয়ার পেছনে কোনও প্রভাবশালীর ভূমিকা আছে কি? এই সূত্রে এক পুলিশ কর্তার নাম উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। তাঁর নাম পনজি স্কিমের একটি মামলাতেও রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার।
এক মহিলা বিধায়কের নামও পেয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। ওই বিধায়ক কলকাতার তৎকালীন এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার সঙ্গে এনামুলের যোগাযোগ গড়ে দিয়েছিলেন সিবিআই দাবি করেছে। এনামুল তাঁকে ২০ লক্ষ টাকা মাসোহারা পাঠাতেন বলেও দাবি। এর পর এনামুল, ওই বিধায়ক এবং পুলিশ কর্তাকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, মুর্শিদাবাদের চার পুলিশ কর্তা ও আধিকারিকের সঙ্গে এনামুলের ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ ছিল। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, রাজ্যের অন্তত দশ জন পুলিশ কর্তা ও পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গেও পাচারকারীদের যোগাযোগের প্রাথমিক ‘প্রমাণ’ তাঁরা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: দশ টাকার নোটে হিসেব লিখে হাতবদল হত গরু
জিবু ম্যাথু মামলায় জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে ইদানীং বালি-পাথরের কারবার চালাচ্ছিল এনামুল। তাতেও রাজ্য পুলিশের কয়েক জন কর্তা যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে সিবিআই দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এক কর্তার দাবি, শুধু বিএসএফ নয়, পুলিশের বেশ কয়েক জন কর্তার সঙ্গে এই গরু পাচার-চক্রের যোগ রয়েছে। ফলে ওই অফিসারদের বক্তব্য রেকর্ড করা প্রয়োজন। তাঁরা তদন্তে সহযোগিতা করলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
আরও পড়ুন: গরু পাচার: বিপুল সম্পত্তির হদিস পেল সিবিআই