— ফাইল ছবি
অতিমারিতে এমনিতেই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পড়াশোনার। নবম থেকে দ্বাদশ, চারটি শ্রেণির জন্য স্কুল যদিও বা খুলল, শিক্ষকদের ডাক পড়ল কলকাতা পুরসভার ভোটের কাজে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে। এই অবস্থায় শিক্ষকদের নির্বাচনের কাজে যেতে হলে ফের পঠনপাঠনের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।
কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কলকাতা পুরসভা ভোটের কাজে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি এসেছে। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে স্কুল খুলেছে। পড়াশোনা ছাড়াও স্কুলের নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশন-সহ নানা কাজ থাকছে তাঁদের। অতিরিক্ত ক্লাসও নিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষকদের ভোটের কাজে যেতে হলে পড়াশোনার যে-ক্ষতি হবে, তা পূরণ করবে কে?
উত্তর ২৪ পরগনার মথুরাপুরের দত্তের চক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পঞ্চানন ময়রা বুধবার জানান, গত মঙ্গলবারই জেলাশাসকের চিঠি এসেছে, কলকাতা পুরসভার ভোটের কাজে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হবে। পঞ্চাননবাবু বলেন, “প্রথমে তিন দিন প্রশিক্ষণ হবে। প্রথম প্রশিক্ষণ সামনের শনিবার। শনিবার স্কুলে অভিভাবকদের ডাকার কথা। তাঁদের ছেলেমেয়েরা কেমন পড়াশোনা করছে, পড়ুয়াদের অসুবিধা হচ্ছে কি না, এই সব বিষয়ে আলোচনা করার কথা। আর ওই দিনই স্কুলে থাকতে পারছি না।” পঞ্চাননবাবুর বক্তব্য, ভোটের কাজ করতে তাঁর অসুবিধা নেই। বিধানসভা ভেটেও কাজ করেছেন। কিন্তু স্কুল খুলতে না-খুলতেই ভোটের কাজের জন্য শিক্ষকদের ডাকলে পঠনপাঠনে অসুবিধার আশঙ্কা।
মন্দিরবাজারের ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক অনিমেষ হালদার জানান, তাঁদের স্কুলের সব পুরুষ শিক্ষককেই কলকাতা পুরভোটের কাজে প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম প্রশিক্ষণ ২৭ নভেম্বর, শনিবার। স্কুল তো সে-দিন খোলা। এত দিন পরে স্কুল খুলল। তার পরেই শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণে চলে গেলে স্কুল চলবে কী ভাবে?” অনিমেষবাবু জানান, তিন দিন প্রশিক্ষণ এবং তার পরে ভোটের সময় আরও তিন দিন— মোট ছ’দিন তাঁরা স্কুলে আসতে পারবেন না।
অনেক শিক্ষকেরই অনুযোগ, ‘‘কলকাতা পুরসভার ভোটে শুধু কলকাতা জেলা থেকেই তো শিক্ষকদের নেওয়া যেতে পারত। কলকাতায় পুরভোটের দিন সেখানে স্কুল ছুটি থাকার কথা। ফলে ছুটির দিনই সেখানকার শিক্ষকেরা ভোটের কাজ করতে পারতেন। আমাদের মতো স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ করে ভোটের কাজে যেতে হত না।”
উত্তর ২৪ পরগনার পাটনিঘাটার দত্তের চক হাই স্কুলের দৃষ্টিহীন শিক্ষক নীলু মিস্ত্রি জানান, কলকাতা পুরভোটের প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর কাছেও চিঠি এসেছে। নীলুবাবু জানান, ভোটের জন্য তাঁরও প্রথম প্রশিক্ষণ সামনের শনিবার। যেতে হবে ডায়মন্ড হারবার থেকে একটু দূরের একটি স্কুলে। নীলুবাবু বলেন, “গত বিধানসভা ভোটে দৃষ্টিহীন বলে আমি ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসে অনেক ঘোরাঘুরির পরে ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি মেলে। এ বারেও চিঠি এল। পুরভোট তো বিধানসভা ভোটের মতো বড় নয়। এই ভোটেও কি আমার মতো দৃষ্টিহীন শিক্ষকের ছাড় মিলবে না?”