ফাইল চিত্র।
প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি তো বটেই, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব ও সক্রিয়। এ বার ওই হিংসা মোকাবিলা এবং আক্রান্তদের বাড়ি ফেরানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটি বা দল হিংসায় আক্রান্তদের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরিদর্শনের ভিত্তিতে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এবং তার সুরাহা করবে। সেই জন্য একটি কমিটি বা দল গড়বে ওই কমিশন। এবং সেই কমিটিকে ৩০ জুনের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
ভোট-পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের ঘরে ফেরানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সরকার গোড়া থেকেই হিংসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি যে-রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছেন, তাতে ভিন্ন ছবি ফুটে উঠেছে। লিগ্যাল সার্ভিসের রিপোর্ট পেয়েও রাজ্য তার নিষ্পত্তি করেনি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটি হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এবং তার নিষ্পত্তি করবে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো দিয়ে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। প্রয়োজনে জাতীয় কমিশনের দল রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যাবে। তাদের সঙ্গে যদি সহযোগিতা করা না-হয়, তার দায়িত্ব বর্তাবে রাজ্য সরকারের উপরে। কমিশনের কমিটির কাজে বাধা দিলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হবে বলেও এ দিন সতর্ক করে দিয়েছে হাই কোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৩০ জুন।
বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তির অভিযোগ ওঠে। মূলত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদেরই মারধর এবং তাঁদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে এই অভিযোগও আছে যে, নিগৃহীতদের অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন এবং এখনও তাঁরা এলাকায় ফিরতে পারেননি। এই নিয়ে হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি একটি বিশেষ বেঞ্চ গড়েছেন। সেই বেঞ্চে তিনি ছাড়াও আছেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার।
এই মামলায় এর আগে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক জন সদস্য, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের এক জন সদস্য এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য-সচিব ওই কমিটিতে থাকবেন। সেই কমিটি তাদের রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়। আদালত সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিটির কাছে ৩২৪৩টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তারা সেগুলি পাঠিয়েছিল বিভিন্ন অভিযোগকারীর এলাকার থানায়। কিন্তু তার কোনও প্রত্যুত্তর মেলেনি।