এই বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র সব কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। আমাদের আপত্তির জায়গাগুলো জানাব। শিক্ষানীতি নিয়ে আমাদের যে-কমিটি তৈরি হয়েছে, তারা সেগুলো সুপারিশ করবে।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রসাদ।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষা শিবিরের সব মহল নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিভিন্ন অংশ নিয়ে আপত্তি-প্রতিবাদে মুখর। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রসাদ রবিবার কলকাতায় প্রশ্ন তুললেন, এমন বিরোধিতা কেন? নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে তো এক দিকে মাতৃভাষায় শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, তেমনই কর্মদক্ষতা আর কর্মসংস্থানও বাড়ানো হবে। রাজ্য সরকার কি চায় না যে, জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার পরে আগামী প্রজন্ম এই সব সুযোগ-সুবিধা পাক?
জাতীয় শিক্ষানীতির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ঘোষণার পরে রাজ্য সরকার একটি নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এ দিন সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শহরে একটি অনুষ্ঠানে এই প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, “গোটা দেশের শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে এই কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে। কস্তুরীরঙ্গনের মতো ব্যক্তিত্ব জাতীয় শিক্ষানীতির প্যানেলে আছেন। তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজ্য সরকার? এটা কোনও রাজনীতির বিষয় নয়। দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার যা-ই করে, রাজ্য তার পাল্টা একটা কিছু করে!’’
জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া প্রকাশের পরে তা নিয়ে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আপত্তি তোলে অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যও। অভিযোগ, প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে গেরুয়াকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে প্রথমাবধি আপত্তি জানিয়ে আসছে এ রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলিও। জাতীয় শিক্ষানীতি আসলে ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশকে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা বলেই অভিহিত করেছে তারা। ‘ব্লেন্ডেড মোড’-এ পঠনপাঠন, চার বছরের স্নাতকদের সরাসরি গবেষণার সুযোগ, এমফিল তুলে দেওয়া, অভিন্ন প্রবেশিকার ভিত্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ভর্তি— এই সব বিষয় ধীরে ধীরে চালু করার দিকেই এগোচ্ছে কেন্দ্র। জাতীয় এই শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সরব পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও (ওয়েবকুটা)। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি সব সরকার মেনেছে বলে ধর্মেন্দ্র প্রধান যা বলেছেন, তা অসত্য। বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার বিকল্প শিক্ষানীতি তৈরি করার জন্য কমিটি গড়েছে। সব থেকে বড় কথা, দেশের প্রথম সারির শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা ওটা মানছেন না। দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে।’’ তরুণবাবু জানান, ৯-১০ মে সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির আহ্বানে দিল্লিতে যন্তরমন্তরে ধর্না হবে। এই শিক্ষানীতির মাধ্যমে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কর্মমুখী শিক্ষার নামে মৌলিক শিক্ষাকে অবহেলা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামে শিক্ষার গৈরিকীকরণ করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি জানান, তাঁরা এর বিরোধিতা করছেন।
সর্বাঙ্গীণ বিরোধিতার আবহে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত একটি বিষয়। তাই জোর করে এই শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘‘এই শিক্ষানীতি একটি প্রাথমিক খসড়া হিসেবে তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের কমিটি যদি সেখানে কিছু যোগ করতে চায়, তা হলে নিশ্চয়ই সেটা দেখা হবে।’’
এই বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র সব কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। আমাদের আপত্তির জায়গাগুলো জানাব। শিক্ষানীতি নিয়ে আমাদের যে-কমিটি তৈরি হয়েছে, তারা সেগুলো সুপারিশ করবে।’’