মমতার ছবির দাম কি কোটি টাকা, শুভা চুপ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি বিক্রি এবং তার গুণমান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন কত টাকায় কিনেছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মমতার ছবি বিক্রির প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি বিক্রি এবং তার গুণমান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন কত টাকায় কিনেছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মমতার ছবি বিক্রির প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু তিনি কিছু জানেন না বলে বিষয়টি এড়ান শুভাপ্রসন্ন।

মমতার ছবি সম্পর্কে সিবিআই তদন্তকারীরা শুভাপ্রসন্নকে মূলত দু’টি প্রশ্ন করেছিলেন। এক, সুদীপ্ত সেন ওই ছবি কিনেছেন বলে যে দাবি করেছেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন কিনা। দুই, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা দিয়ে মমতার ছবি কিনেছিলেন সুদীপ্ত। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির দাম এত হতে পারে কিনা।

Advertisement

সিবিআই সূত্র বলছে, চার ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে যখন মমতার ছবি প্রসঙ্গ উঠেছে, তখনই অস্বস্তিতে পড়েছেন শুভাপ্রসন্ন। চেষ্টা করেছেন জবাব এড়ানোর। বারবার প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেছেন, তার নির্যাস এই যে, ছবির প্রদর্শনী বা বিক্রির অনুষ্ঠানে গেলেও লেনদেনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কুণাল ঘোষের মতো যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে থাকতেন, তাঁরাই বিষয়টি বলতে পারবেন।

তদন্তকারীরা শুভাপ্রসন্নর কাছে জানতে চান, খুব বড় মাপের শিল্পীর আঁকা ছবির দাম কত হতে পারে? শুভাপ্রসন্ন বলেন, প্রায় ৩০-৪০ লক্ষ টাকা। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কি প্রায় দু’কোটি টাকায় বিক্রি হওয়ার যোগ্য? এর কোনও স্পষ্ট জবাব শুভাপ্রসন্ন দেননি বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।

শুভাপ্রসন্নর বক্তব্য জানার জন্য এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাঁর বাড়িতে ফোন করা হলে এক জন ফোন তুলে বলেন, “উনি বাড়ি নেই। আর্টস একরে গিয়েছেন।” আর্টস একরে ফোন করা হলে এক জন, “স্যার নেই” বলে ফোন কেটে দেন। তার পরে থেকে ফোন বেজে যায়। কেউ ধরেননি। শুভাপ্রসন্নর মোবাইলও বেজে গিয়েছে। তাঁকে পাঠানো এসএমএসের-ও উত্তর মেলেনি। তৃণমূল সূত্রেও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।সারদার টাকায় মমতার ছবি কেনা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয় সুদীপ্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে। রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন সুদীপ্ত এক বার দাবি করেছিলেন, তিনি ছবি কেনেননি। পরে জেলে বসে ইডি-কে লেখা চিঠিতে কুণাল দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে ছবি কেনার কথা স্বীকার করেছেন সুদীপ্ত।

যদিও টাকার অঙ্ক অত নয়, এবং শেষ পর্যন্ত ছবি তিনি পেয়েছিলেন কি না তা-ও তাঁর মনে নেই বলে সারদা-কর্তা তাঁকে জানিয়েছেন, দাবি কুণালের। কুণাল লেখেন, ছবি কেনার জন্য তৃণমূলের এক সাংসদকে নগদ টাকা দিয়েছিলেন বলে তাঁকে জানান সুদীপ্ত। তিনি বলেছিলেন, ‘নেত্রীর ছবি কিনে তাঁকে খুশি করাই তো মূল কথা ছিল। ওঁর ছবিতে আমার কোনও আগ্রহ ছিল না।’ লিখেছেন কুণাল।

গত লোকসভা ভোটের প্রচারে মমতার ছবি বিক্রি প্রসঙ্গটি বিরোধীদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল। এই প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে বিঁধেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী।

সিপিএম নেতা গৌতম দেব অভিযোগ করেন, “আয়কর দফতরের হিসেব অনুযায়ী ছবি বিক্রি করে তৃণমূল ২০০৪-০’৫ এবং ২০১১-’১২ সালে ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা পেয়েছিল।” তাঁর কাছে এ নিয়ে তথ্য রয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ওই সব তথ্য হাতে পেতে গৌতমবাবুকে ডেকে পাঠাতে পারে সিবিআই। পাশাপাশি সিবিআই নিজেও আয়কর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার ছবির প্রদর্শনী করতে বিপুল খরচের উল্লেখ রয়েছে তৃণমূলের আয়কর রিটার্নে।

পরবর্তী হাজিরার দিনে শুভাপ্রসন্নকে ফের ছবি প্রসঙ্গে জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement