Anubrata Mondal

কেষ্টর মামলায় টাকা জোগানোর ‘চিন্তামণি’র খোঁজ

গরু পাচারের মামলায় অনুব্রত, তাঁর মেয়ে সুকন্যা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অনেক আগেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

Advertisement

  শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৩
Share:

অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

চিনি খেলে চিন্তামণিই জোগান দেন বলে বাংলা প্রবাদের বিশ্বাস। কিন্তু গরু পাচার থেকে নানা দুর্নীতিতে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে ওঠার অভিযোগে ধৃত বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের মামলার ব্যাপক খরচ জোগাচ্ছেন কোন ‘চিন্তামণি’? বেশ কিছু দিন ধরে হন্যে হয়ে এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার পরে অজয় নদের তীরবর্তী একটি থানার এক অফিসারের হদিস পেয়েছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

Advertisement

গরু পাচারের মামলায় অনুব্রত, তাঁর মেয়ে সুকন্যা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অনেক আগেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার পরেও কেষ্টর মামলায় নামী আইনজীবীদের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে কী ভাবে, সেটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল ইডি-কর্তাদের। ইডি সূত্রের দাবি, ওই পুলিশ ইনস্পেক্টরের সন্ধান পাওয়ার পরে তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নিম্ন ও উচ্চ আদালতের মামলায় আইনজীবীদের খরচ চালানোর কোটি কোটি টাকা আসছে মূলত ওই অফিসারের কাছ থেকেই। মামলায় কেষ্টর হয়ে নামী বর্ষীয়ান কৌঁসুলিদের দিয়ে সওয়াল করাতে এ-পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারের বিশাল অঙ্কের কালো টাকা ওই পুলিশ ইনস্পেক্টরের কাছে রয়ে গিয়েছে এখনও। এবং সেই টাকা থেকেই মামলার খরচ জুগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ইডি-র অভিযোগ, ২০১৫ সাল থেকে অজয় নদের পাশের তিনটি থানা এলাকায় গরু পাচারের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন ওই ইনস্পেক্টর। গরু পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের থেকে পাওয়া পাচারের লভ্যাংশ জমা হত তাঁর কাছেই।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রতের গ্রেফতারির পরেই ওই পুলিশ ইনস্পেক্টর মামলার খরচ পাঠাতে শুরু করেন। প্রথম দিকে আসানসোল আদালতের এক আইনজীবীর মাধ্যমেই আসানসোল ও কলকাতা হাই কোর্টে কৌঁসুলিদের খরচ মেটানো হচ্ছিল। দিল্লির সিবিআই বিশেষ আদালত ও দিল্লি হাই কোর্টে অনুব্রতের মামলায় যুক্ত আইনজীবীদের টাকা রাজ্যের শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীর হাত দিয়ে একটি ব্যাঙ্ক মারফত দিল্লিতে পাঠানো শুরু হয়। ইডি সেই অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, এনামুল এবং কেষ্টর প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে জেরা করে ওই পুলিশ অফিসারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের বয়ানও নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এক ইডি-কর্তা বলেন, ‘‘গরু পাচারের কত টাকা কোন কোন প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছেছিল, এখন তার খোঁজ চলছে। সে-ক্ষেত্রে ওই ইনস্পেক্টরের বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

ইডি সূত্রের খবর, অনুব্রতের নির্দেশে ২০১৫ থেকে ২০২০-র মধ্যে গরু পাচারের কোটি কোটি কালো টাকা কলকাতায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ওই পুলিশ অফিসারই পৌঁছে দিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এই কাজে ওই ইনস্পেক্টরের সঙ্গে অনুব্রতের দুই দেহরক্ষী সেহগাল ও মাধব (দুর্ঘটনায় বছরখানেক আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে) থাকতেন। তদন্তকারীদের দাবি, রাতের অন্ধকারে পুলিশের গাড়িতে করে সেই টাকা পৌঁছে দেওয়া হত কলকাতায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement