সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। — ফাইল চিত্র।
গ্রেফতারির দু’মাসের মাথায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ইডি সূত্রে খবর, শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ১২৬ পাতার মূল চার্জশিট জমা পড়েছে। মোট চার্জশিট অবশ্য ৭ হাজার ৬০০ পাতার। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটে ‘এসডি কনসালটেন্সি’ এবং ‘ওয়েলথ উইজেড’ নামের দু’টি সংস্থার নাম রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, চার্জশিটে এমনটা উল্লেখ রয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
এর আগেই আদালতে ইডি জানিয়েছিল, একটি সংস্থার মাধ্যমে এক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। হাওয়ালার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। সুজয়কৃষ্ণ চারটি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলেও আদালতে দাবি করে ইডি। হাওয়ালার টাকা আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান ইডির আইনজীবী। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তরফে দাবি করা হয়, সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে।
সুজয়কৃষ্ণ-ঘনিষ্ঠ সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরাকে আগেই কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি আধিকারিকেরা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, সুজয়কৃষ্ণের নির্দেশেই রাহুল ফোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে দিয়েছিলেন। রাহুলকে সেই নির্দেশ নাকি দিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণই। এই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ ইডির হাতে আসে। সুজয় ফোন করে রাহুলকে তথ্য মোছার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করতে চাইছে ইডি। এই বিষয়ে আদালতের প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলেছে। প্রয়োজনে ইডি আধিকারিকেরা সুজয়কৃষ্ণকে জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। জেলে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুজয়ের সংস্থার শেয়ারদর ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪০ টাকা করতে সাহায্য করেছিলেন। ইডি সূত্রে খবর, ক্যামাক স্ট্রিটের এক নির্মাণ সংস্থার মালিককে হুমকি দিয়ে ছ’টি সংস্থার মাধ্যমে ঘোরানো হয় সুজয়ের টাকা। তার পরে প্রায় ৪৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি হওয়া শেয়ারের টাকা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা হত।
সম্প্রতি ইডির নজরে থাকা সুজয়ের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু সংস্থার দফতরে তল্লাশি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সেখানেই তাঁরা জানতে পারেন, ওই সব ক’টি সংস্থাই আসলে জাল কোম্পানি। প্রত্যেকটিরই দফতর পার্ক স্ট্রিটের আপার উড স্ট্রিটে। এর মধ্যে আবার একটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টও। কোভিড পরিস্থিতির আগে পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর পুত্র ডিরেক্টর পদে ছিলেন। পরে মালিকানা বদলায়। ইডি সূত্রে খবর, শীঘ্রই ওই অ্যাকাউন্ট্যান্টকে তলব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, নথিও উদ্ধার হয়েছে।
গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কে গ্রেফতার করে ইডি দাবি করেছিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২০১৮ সাল থেকে এই দুর্নীতিতে ‘কাকু’ জড়িত বলে দাবি করে ইডি। জেলে থাকাকালীন সম্প্রতি সুজয়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সে কারণে বেশ কিছু দিন প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। গত ১৭ জুলাই জেলে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার পর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে সুজয়ের হৃদ্যন্ত্রে সমস্যার কথা জানিয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালতে জানানো হয়েছে, ‘কালীঘাটের কাকু’র ধমনীতে তিনটি ‘ব্লকেজ’ ধরা পড়েছে। ‘বাইপাস সার্জারি’ করা হতে পারে। এর পর তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখতে চেয়েছিলেন বিচারক। বিকেলে সেই রিপোর্ট জমা দিয়ে আরও এক বার জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।