শেখ শাহজাহানের বাড়ির ভিতরে ইডির আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
ফের সন্দেশখালিতে ইডি। এ বারও গন্তব্য শেখ শাহজাহানের বাড়ি। এর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সন্দেশখালিতে রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় শাহজাহানের বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়ে হিংসার মুখে পড়তে হয়েছিল ইডির আধিকারিকদের। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে ইডি। তল্লাশির আগাম খবর দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশকে। শাহজাহানের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। জওয়ানদের সঙ্গে রয়েছে কাঁদানে গ্যাস। ন্যাজাট থানা থেকে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। শাহজাহানের বাড়ির মূল দরজার সামনে পাহারায় রয়েছে রাজ্য পুলিশও। তাদের কাছেও রয়েছে কাঁদানে গ্যাস।
ইডি সূত্রে খবর, ২৫টি গাড়িতে ১২৫ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিয়ে সাত জনের একটি দল বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ পৌঁছয় শাহজাহানের বাড়িতে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের মাথায় হেলমেট, হাতে গার্ড পরে সব রকম ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। জেলা পুলিশকে এ দিন আগাম খবর দিয়ে রাখা হয়েছিল ইডির তরফ থেকে। ইডি শাহাজাহানের বাড়িতে পৌঁছলে তাঁদের কাছে তল্লাশির পরোয়ানা দেখতে চায় পুলিশ। তা দেখানোর পরেই পুলিশের তরফে সহযোগিতার আশ্বাস মেলে।
শাহজাহানের বাড়ির সামনে কাঁদানে গ্যাস নিয়ে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। —নিজস্ব চিত্র।
যদিও শাহজাহানের বাড়িতে ঢুকতে এ বারও বাধা পেতে হয়েছে ইডির গোয়েন্দাদের। শাহজাহানের বাড়িতে এ দিনও তালা লাগানো ছিল। বার বার ডাকাডাকি করায় বাড়ির ভিতর থেকে এক জন বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁর কাছে চাবি চাওয়া হলে তিনি জানান, তাঁর কাছে চাবি নেই। এর পরেই তালা ভাঙার জন্য দু’জন চাবিওয়ালাকে ডেকে পাঠায় ইডি। তাঁদের সাহায্যেই বেশ কিছু ক্ষণ ধরে চলে তালা ভাঙার প্রক্রিয়া। অবশেষে সকাল পৌনে আটটা নাগাদ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকেন ইডির ছ’জন আধিকারিক। ইডির তরফে পুরো বিষয়টি ভিডিয়ো করে রাখা হয়েছে। ছ’জন ইডি আধিকারিকের পাশাপাশি তাদের তরফে তিন জন সাক্ষীকেও আনা হয়েছে। সাক্ষী হিসাবে রয়েছেন দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। সম্পূর্ণ তল্লাশি পর্ব তাঁদের উপস্থিতিতেই চলবে।
ইডির সঙ্গে রয়েছেন তাদের নিজস্ব ভিডিয়োগ্রাফার। তল্লাশির পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়ো করে রাখা হবে। পুলিশও তল্লাশি প্রক্রিয়াটি ভিডিয়ো করতে চায় বলে জানানো হলে ইডি তা মানা করে দেয়। ইডির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, দরকারে তাদের করা ভিডিয়ো নিতে পারবে পুলিশ।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলার তদন্তে সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন ইডির পাঁচ আধিকারিক। কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে যেতে হয় তাঁদের। তিন জনকে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। ল্যাপটপ, মোবাইল থেকে নগদ টাকা খুইয়ে ফেরা ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আবার এফআইআরও হয় ন্যাজাট থানায়। পাল্টা ইডিও একটি এফআইআর দায়ের করেছে। ঘটনার দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পুলিশের জালে পড়েননি ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। এর মধ্যে রাজ্যপাল থেকে হাই কোর্ট, সব পক্ষই ভর্ৎসনা করেছে জেলা পুলিশকে। এখনও এই সংক্রান্ত মামলা চলছে কলকাতা হাই কোর্টে।